তিস্তা প্রকল্প: ভারতের প্রস্তাবকে ‌‘দুরভিসন্ধি’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা

দুই দিনের দিল্লি সফর শেষে শনিবার ঢাকায় ফিরে গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর মধ্যে রেল যোগাযোগ বিষয়ক সমঝোতা অন্যতম।

বিষয়টি নিয়ে দেশের রাজনীতিতে শোরগোল চলছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞরা প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করছেন।

এ ছাড়া ওই সফরে তিস্তা মহাপরিকল্পনার বিষয়েও কথা হয় ভারতের সঙ্গে। তবে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত তিস্তা নদীর পানি চুক্তির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

এ নিয়ে সরকারের অভ্যন্তরসহ রাজনৈতিক মহলে চলছে তুমুল সমালোচনা।

মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তিনি জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনায় অর্থায়নে চীন ও ভারত আগ্রহী। খুব শীঘ্রই ভারতের একটি কারিগরি দল বাংলাদেশ সফরে আসবে।

আর ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার দেশ বিক্রি করছে না। দেশের জন্য যা ভালো সেটাই করছে।

তবে বিতর্কিত এ রেল সংযোগ প্রকল্পে বাংলাদেশের কোনো লাভ দেখছেন না বিশ্লেষকেরা। ভারত অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বাড়াতে বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে, এমন অভিযোগও তাদের।

এ ছাড়া তিস্তা মহাপ্রকল্পে চীনের সঙ্গে কথাবার্তা হওয়ার পর ভারতের প্রস্তাব দেওয়াকেও দুরভিসন্ধি বলছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, ভারত অর্থনৈতিকভাবে চীনের সমকক্ষ নয়। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিপূর্বে যেসব অর্থনৈতিক লেনদেন করেছে, সেখানেও কথা রাখেনি তারা। তাই তিস্তা মহাপ্রকল্পে চীনকে হটিয়ে ভারতকে ডেকে আনা মানে হলো প্রকল্পের কাজ নিঃসন্দেহে দীর্ঘমেয়াদি হওয়া।

ভারতের অর্থায়নে অতীতে নেয়া প্রকল্পগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে সম্প্রতি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, তিস্তা মহাপ্রকল্প চীনের অর্থায়নে হলে সেটি দ্রুত হতো। এখন ভারতের অর্থায়নে হলে সেটি অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগবে।

এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত তৌহিদ হোসেন দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, তিস্তা চুক্তি হবে না, এটা অনেকটাই নিশ্চিত। আর তিস্তা মেগা প্রকল্পে চীনকে বাদ দিয়ে ভারতে আমন্ত্রণ জানানো মানে হলো সেটির ভাগ্যও ঝুলে যাওয়া। তাদের লোনের ডিসবার্সমেন্ট প্রসেস খুব স্লো। অতীতেও আমরা এমন দেখেছি।

অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রেল যোগাযোগ প্রকল্পেও বাংলাদেশের কোনো লাভ দেখছেন না সাবেক এ কূটনীতিক। তিনি বলেন, এর জন্য যে অবকাঠামোগত সক্ষমতা প্রয়োজন, সেটি বাংলাদেশের নেই। এখানে বাংলাদেশের লাভের বিপরীতে ক্ষতির আশঙ্কা দেখছেন তিনি।