অসহনীয় লোডশেডিংয়ে উত্তরের জনজীবন বিপর্যস্ত

প্রতীকী ছবি

বগুড়ার তুহিন হোসেন নামে এক যুবক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘হঠাৎ এতো লোডশেডিংয়ের কারণ কী? গত ৪-৫ বছরে বগুড়ায় এতো বেশি লোডশেডিং আমি দেখিনি।’ তার এই স্ট্যাটাসের পর উত্তরের লোডশেডিংয়ের খোঁজ-খবর নিয়েছে দ্য মিরর এশিয়া। তাতে উঠে এসেছে কেবল বগুড়া নয়, ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে নাকাল পুরো উত্তরাঞ্চল। সেখানকার বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসি (নেসকো) বিষয়টি স্বীকার করেছে।সংস্থাটি বলছে, তাদের কাজ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড-পিজিসিবির মাধ্যমে আসা বিদ্যুৎ বিতরণ করা। গত কয়েকদিন ধরে তারা যে চাহিদা দিচ্ছেন সেই অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

উদাহরণ হিসেবে নেসকোর এক কর্মকর্তা জানান, বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত রাজশাহীতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৩০১ মেগাওয়াট। কিন্তু সেখানে পিজিসিবি সরবরাহ করেছে ২৭৩ মেগাওয়াট। বাকিটুকুর ঘাটতি ছিল। এ কারণে সেখানে লোডশেডিং হয়েছে।

এদিকে পিজিসিবি সূত্র বলছে, আবহাওয়ার কারণে বিদ্যুতের চাহিদার ক্ষেত্রে তারতম্য হয়। সারাদেশে বিদ্যুতের গড় চাহিদা রয়েছে ১৬০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রতিদিন ৯০০ মেগাওয়াট। আর রাজশাহী বিভাগে এই চাহিদা ১৫০০ মেগাওয়াট। সেখানে রাজশাহীতে ২৫০ এবং রংপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। যে কারণ লোডশেডিং বেড়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন জেলার মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে পিজিসিবির দেওয়া হিসাবের চেয়ে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেশি বলে মনে মনে হয়েছে।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ২ নম্বর তিরনইটাট ইউনিয়নের ব্রহ্মতল গ্রামের বাসিন্দা কাবুল ইসলাম জানান, দিনের বেলা মোটামুটি বিদ্যুৎ থাকে, কিন্তু সমস্যা শুরু হয় সন্ধ্যার পর। তখন ৪০ মিনিট, ১ ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। রাতে বৃষ্টি হলে একটু ঘুমাতে পারি, না হলে গরমে ঘুম আসে না।

একই কথা বললেন ঠাকুরগাঁওয়ের স্কুল শিক্ষক নুর মোস্তফাও। তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রাতের বেলা অসহনীয় লোডশেডিং হচ্ছে। রাতে এভাবে বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করলে কীভাবে ঘুমাবো। চার্জার ফ্যান দুয়েক ঘণ্টা সাপোর্ট দেয়। কিন্তু তাতে পরিবারের সবার হয় না।

রংপুর ও রাজশাহীর বিদ্যুতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-পিজিসিবির কার্যালয়টি বগুড়ায় অবস্থিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার একজন কর্মকর্তা দ্য মিরর এশিয়াকে জানান, উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা। চড়া মূল্যে বেসরকারি খাতের এ বিদ্যুৎ দিয়ে মূলত দেশের উত্তরাঞ্চলের চাহিদা মেটানোর কথা। কিন্তু চুক্তির ধারে কাছেও নেই আদানি। তারা চাহিদার প্রায় ২৫ ভাগ বিদ্যুৎ দিচ্ছে বাংলাদেশকে।

এছাড়া ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় জ্বালানি তেল সংকটের কারণে সেখান থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা নেসকো সেটিও পাচ্ছে না। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।  

পিজিসিবি বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন জানান, আবহাওয়ার কারণে উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে লোডশেডিংও বেড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অন্তত সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে।