মেয়ের পরকীয়ার বলি সাবেক এমপির স্ত্রী: পিবিআই

১৩ বছর আগে ঢাকার সাভারে নিজ বাড়িতে ঘাতকদের হামলার হামলার শিকার হন সাবেক সংসদ সদস্য খান মজলিসের স্ত্রী সেলিমা খান মজলিস। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিলে মৃত্যুবরণ করেন। সেই সময়ের চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডটিকে আত্মহত্যা বলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। ঘটনার এতদিন পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে উঠে এসেছে লোমহর্ষক এক কাহিনী৷ পিবিআই বলছে, বড় মেয়ে শামীমা তাহের পপির পরকীয়া প্রেমের বলি হয়েছেন সাবেক এই এমপির স্ত্রী৷ মেয়ের পরকীয়ার সম্পর্কের কথা জেনে যাওয়ায় প্রেমিক সুবলকে সঙ্গে নিয়ে মাকে পেশাদার খুনিদের মতো হত্যা করেন পপি। 

মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।

তিনি বলেন, আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করি। তদন্ত শুরু হলে আমরা ভিকটিমের বড় মেয়ে আসামি শামীমা খান মজলিশসহ বাকি দুই মেয়েকেও সন্দেহের মধ্যে রাখি। আমরা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি যে ওই বাসায় কারা কারা আসতো। জানতে পারি একজন ইলেকট্রিশিয়ান মাঝে মাঝে ওই বাসায় আসতো। কিন্তু তার বহুদিন ওই বাসায় আসা-যাওয়া নেই। জানতে পারি সে বিগত ৩০ বছর ধরে সাভার থানায় ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করছে। সেই সঙ্গে পাশেই তার একটি বড় মুদির দোকানও আছে।  কিন্তু আমরা তদন্তের সময় যেসব কথা জানতে পারি তার মধ্যে ঘটনার সময় বাড়ির একটি সুইচ বোর্ড ভাঙা এবং দুইটা তার বের করে রাখার একটা বিষয় উঠে আসছিল। এরপর আমরা আসামি ইলেকট্রিশিয়ান সুবল কুমার রায়কে (৫০) নিয়ে আসি।

সুবলকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ভিকটিম সেলিমা খান মজলিসের (৬৩) বড় মেয়ে তার স্বামীকে নিয়ে নিচতলায় বসবাস করতেন। সেখানে নিয়মিত যাতায়াতের এক পর্যায়ে আসামি শামীমা খান মজলিসের স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ২০০১ সালে আসামি সুবল কুমার রায় এবং শামীমা খান পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এই বিষয়টি ২০০৫ সালে জানাজানি হলে তাকে মারধর এবং অপমান করা হলে তিনি বাসা থেকে চলে যান। তাকে আর এই বাসায় আসতে নিষেধ করা হয়। ২০০৮ সালে সুবল কুমার রায় বিয়ে করেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি আবার সেই বাসায় যাতায়াত শুরু করেন। এই যাতায়াত দেখে ফেলায় সুবল ও শামীমা তাহের পপি মিলে সেলিমা খানকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেন।

হত্যার দিনের ঘটনা

যেদিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে সেদিন ভোরবেলা ফজরের নামাজের সময় ভুক্তভোগী সেলিমা খান মজলিশ ছাদে উঠেছিলেন এবং সেখান থেকে দেখতে পান সুবল চুপিচুপি তার বাড়ির দিকে আসছেন। এরপর তিনি এটা দেখে চিৎকার করতে করতে নিচে নামছিলেন। তখন সুবল এবং শামীমা খান মজলিস মায়ের চিৎকার থামাতে ওপরে যান। মাকে থামানোর জন্য শামীমা তাহের পপি তাকে জাপটে ধরেন এবং পাশে থাকা একটি ফল কাটার চাকু দিয়ে গলার দুই পাশে তিনটি পোচ দেন। এরপর যখন তারা দেখেন তার মা মারা যাননি, তখন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আসামি সুবল ইলেকট্রিক বোর্ড ভেঙে সেখান থেকে দুইটি তার বের করে ভিকটিমের মাথায় ইলেকট্রিক শক দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ফলে মৃত্যুর পরে ময়নাতদন্তে একটি প্রতিবেদন আসে না। ঘটনাটি ঘটে রান্না করে। কিন্তু ভুক্তভোগীকে শোবার ঘর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এই ঘটনায় এখন সুবল, শামিমা তাহের পপি ও সেই সময় বাড়ির গৃহকর্মী আরতি সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।