খাল দখল করে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার  ‘সুরের ধারা’!

‘সুরের ধারা’ একটি গানের স্কুল। এর যাত্রাকাল ১৯৯২। প্রতিষ্ঠাতা হলেন প্রভাবশালী রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। প্রথমে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ার একটি ভাড়া বাসা নিয়ে ছেলেমেয়েদের গান শেখানো হতো ‘সুরের ধারায়’। এরপর ১৯৯৬ সালে মোহাম্মদপুর-গাবতলী বেড়িবাঁধের পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাক সমিতি সরিয়ে দিয়ে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। 

খালের জায়গা দখল করে এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়ছে বলে স্থানীয়রা দ্য মিরর এশিয়াকে জানিয়েছেন। 

জানা গেছে, রামচন্দ্রপুর ও কাটাসুর মৌজার সরকারি খাস জমি দখল করে আন্তঃজেলা ট্রাক সমিতি যেমন বহুতল ভবন করেছিল; তেমনি সুরের ধারা তাদের উৎখাত করে এখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায়। অভিযোগ রয়েছে, দখল থেকে শুরু করে সার্বিক বিষয়টি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সরাসরি তত্ত্বাবধান করেন। 

কিন্তু শুরুতে তিনি সফল হতে পারেননি। তাই বলে তিনি থেমেও থাকেননি। ২০০৮ সালে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে তিনি এ জমি দখলে যান। বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাক সমিতি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন তখনকার এমপি, মন্ত্রী ও স্থানীয় কমিশনারের উপস্থিতিতে। দখল নেন ৫৫ শতাংশ জমি।

এ জমি দখল নিতে গিয়ে উত্তর দিকের বাইতুল জান্নাত জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্সের ভবন ভেঙে কিয়দংশও দখল করেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ওই মসজিদ আর মাদ্রাসাও গড়ে উঠেছিল খাল ভরাট করে। 

রেজনওয়ানা চৌধুরী বন্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এখানে ক্ষান্ত দেননি। আরো জমির প্রয়োজনে রামচন্দ্রপুর খাল ধীরে ধীরে ভরাট করতে থাকেন। খালের নাব্যতা মেরে ফেলে তিনি সেখানে সুরের ধারা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এ প্রতিষ্ঠানটির কারণে খালের উপস্থিতিতি বুঝার উপায় নেই এখন। 

স্থানীয়রা বলছেন, তিনি প্রথম খাল ভরাটের কাজ শুরু করেন। এরপর সাদিক অ্যাগ্রো, তারা খাল ভরাট করে। দ্বিতীয়বারও সুরের ধারা ৫৫ শতাংশ জমি ভরাট করে নিয়ে নেয়। মোট ১১০ শতাংশ জমি সুরের ধারা দখল করে ভোগ করছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ এক ব্যক্তি জানান।

স্থানীয় সূত্র বলছে, সাদিক অ্যাগ্রোর অবৈধ জমি সরকার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু ‘সুরের ধারা’র প্রতিষ্ঠাতা রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কিছুই করতে পারবে না। তার হাত অনেক বড়। এখানে সরকারের রাজনৈতিক অনেক বড় বড় নেতা আসেন।

সূত্র আরও বলেন, ২০১৭ সালে পুলিশ এসে লাঠিপেটা করে অবৈধ জমি দখলের পর তারা এ ভবন করে। যত দূর জানা যায়, এখানের খাস জমি দখল করে তিনি (রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা) এসব করেছেন। পরে হয়তো বরাদ্দও নিতে পারেন। একবার এক অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী ও ওবায়দুল কাদের এসেছিলেন। এখানকার এমপি, বর্তমানে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী জাহানঙ্গীর কবির নানকও ছিলেন।

সামগ্রিক বিষয়ে কথা বলতে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে ফোন করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রথমে তিনি ফোন ধরে পরে আবার ফোন করতে বলেন। এরপর তিনি  আর ফোন ধরেননি।