‘জিন সাপের’ কামড়ে ৫০ জন অসুস্থ

যা বললো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

যশোরের চৌগাছায় অদৃশ্য কথিত ‘জিন সাপের’ কামড়ে প্রায় ৫০ জন নারী-পুরুষ অসুস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে। সোমবার উপজেলার রাণীয়ালি গ্রামে গিয়ে সাপ আতঙ্ক দেখা গেছে।

জানা গেছে, গত বুধবার রাতে উপজেলার রাণীয়ালি গ্রামের আব্দুর হকের স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে সাপে দংশন করে। এর পরের দিন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরপর থেকে এলাকায় সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন কিন্তু কেউ সাপ দেখেনি। শরীরে জ্বালাপোড়া আর জ্ঞান হারানো ঘটনা ঘটলেই ওঝা কবিরাজদের কাছে যাচ্ছেন। ওঝারা শরীরে বিষের উপস্থিতি নিশ্চিত করলেই কেউ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, কেউ বা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ও কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

এ পর্যন্ত গ্রামটিতে ৩০ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৬ জন নারী ও ২ জন পুরুষ মতো যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসব ব্যক্তিদের হাত ও পায়ে লাল দাগ আবার দাগ ছাড়াও কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন। কেউ কাজ করার সময় আক্রান্ত হচ্ছেন, কেউবা ঘুম থেকে উঠে।

স্থানীয়রা জানান, সাপে কাটার কথা শোনা গেলেও কেউ এখনো সেই সাপ দেখেননি। কবিরাজ-ওঁঝারা বলছেন, এটি জিন সাপ। গ্রামের সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাসও করছেন। ব্যাস! রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। অনেকেই স্থানীয় ওঁঝা কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছেন। জিন সাপে আতঙ্কের সুযোগ নিয়েছেন স্থানীয় ওঝা, সাপুড়ে, কবিরাজরাও। জিন সাপে দংশিত হচ্ছে মানুষ- এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে তারা লুটে নিচ্ছে জনসাধারণের অর্থ।

হাসপাতালে ভর্তি প্রান্ত মণ্ডল নামে একজন বলেন, রোববার সকালে রান্নাঘরের শুকনা কাঠ সাজাচ্ছিলাম। এ সময় হাতে কিছু একটা কামড় দিলে জ্বলে উঠে। হাতের ডান হাতের কবজিতে লাল দাগ সৃষ্টি হয়। বাড়ির লোকজনের পরামর্শে স্থানীয় ওঝার কাছে গেলে তিনি আমার শরীরে বিষের উপস্থিতি টের পান। এরপর রোববার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।

তমালিকা নামে এক নারী বলেন, রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। সকালে দেখি হাতে জ্বলছে। এক পর্যায়ে হাত অবশ হয়ে যায়। সেখানে কিছু একটা কামড়ের দাগ রয়েছে। ওঝার কাছে গেলে বিষের উপস্থিতি পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন অনেকটা সুস্থ রয়েছি।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবু হায়দার মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কোনো রোগীকে সাপে কামড় দেয়নি। সকলে আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মেডিকেল ভাষায় এ রোগটাকে বলা হয় ‘‘ম্যাস হিস্টিরিয়া ইনসেক্ট বাইট’। এটি মুলত মানুষের নিউরো হরমোন ও মানসিক দ্বন্দ্বের কারণে হয়ে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘এই রোগে মানুষ অসুস্থ হলে প্রথমে শরীর ঝিন-ঝিন করে, শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, স্পর্শ অনুভূত হয় না ও অজ্ঞান হয়ে যায়। তাছাড়া অস্বাভাবিকভাবে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া ও বুকের ধরফরানি লক্ষণ দেখা যায়।’

যশোর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, চৌগাছার থেকে ১০ জন নারী-পুরুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে তাদের শরীরে সাপে কাটার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তারা সবাই সাপ আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মেডিসিন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা অবজারভেশনে রেখে তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হবে।