শুধু খাল নয়, খেলার মাঠও দখলে রেখেছে ইউল্যাব

ঢাকার রামচন্দ্রপুর খাল দখল করে গড়ে উঠেছে ইউল্যাবের স্থায়ী ক্যাম্পাস। ছবি: দ্য মিরর এশিয়া

সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার ‘সুরের ধারার’ মতো একই খাল দখল করে গড়ে উঠছে বেসরকারি বিশ্বদ্যিালয় ইউনিভারসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ-ইউল্যাব। খাল ভরাট করে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে তারা। সরেজমিনে ঘুরে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে কথা হয় সেখানকার নিরাপত্তা কর্মী সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। দ্য মিররর এশিয়ার এ প্রতিবেদককে ইউল্যাবের দখলে থাকা পুরো এলাকা ঘুরেও দেখান সিরাজ। উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে পুরো এলাকা।

সিরাজ জানান, বিশ্বদ্যিালয় কর্তৃপক্ষ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার রামচন্দ্রপুর খালের প্রায় ২৫ বিঘা জমি দখলে নিয়েছে। ২০০৪ সালের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দখল শুরু হয়। এরপর একে একে খালের জমি দখলে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় আরো তিনটি প্রতিষ্ঠান। জেমকন গ্রুপ, অর্গানিকেয়ার এবং মীনা বাজার শপিং মলের গুদামঘরের জন্য নির্মাণ করা হয় বহুতল সাতটি ভবন। আশপাশে ইউল্যাবের মালিকানাধীন আরো বেশ কয়েকি টিনশেড স্থাপনাও রয়েছে এই খালের জমির ওপর। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে একটি বিশাল খেলার মাঠও রয়েছে দখল করা জায়গার মধ্যে। এ মাঠটি ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ ভাড়া দেয়। বিনিময়ে  প্রতিদিন ২ লাখ টাকা ভাড়া তোলে ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ। তাদের সবগুলো স্থাপনা গাবতলী বেড়িবাঁধের পশ্চিম দিকে কাটাসুর ও রামচন্দ্রপুর মৌজার অন্তর্ভুক্ত। ইউল্যাবের এসব স্থাপনা তুরাগ নদীর শাখা রামচন্দ্রপুর খাল ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বলে স্বীকার করেন দীর্ঘ বছর যাবত কর্মরত নিরাপত্তা কর্মী সিরজ। 

মোহাম্মদপুরের এসব দখল হওয়া খাল এবং জলাধার নিয়ে গবেষণা করেন ওয়াটারকিপারের নির্বাহী পরিষদের সদস্য শরিফ জামিল। দ্য মিরর এশিয়াকে তিনি জানান, এ স্থানে ২০০৪ সালেও ছিল খাল। পানি ছাড়া কিছু চোখে পড়তো না। স্থানীয় প্রভাবশালী লোকের মাধ্যমে খাল দখলে নেয় এই শিল্প গ্রুপটি। শুরু করে ভরাট কাজ। যদিও আইনের দৃষ্টিতে এটি দণ্ডনীয় অপরাধ বলে উল্লেখ করেন শরিফ জামিল।

সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটিকর্পোরেশন এ এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাদিক এ্যাগ্রোসহ বেশ করেকটি প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করেছে। এখন সেই স্থানে খালের খনন কাজ চলছে। 
সূত্র জানায়, কাজী শাহেদ আহমেদ ২০২৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তার ছেলে কাজী নাবিল আহমেদ এই প্রতিষ্ঠান দেখাশুনার দায়িত্বভার নেন। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগর যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেরও সহসভাপতি।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মাহে আলম জানান, সবকিছু পরিকল্পনায় আছে। কিন্তু গোপনিয়তার কারণে প্রকাশ্যে কিছু বলা যাচ্ছে না। 

এ বিষয়ে ইউল্যাবের বোর্ড অব ট্রাস্টি কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোনও ধরেননি।