যদি আজ শহিদ হই নিথর দেহটা রাজপথে ফেলে রাখবেন, মৃত্যুর আগে সাঈদ

রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এই শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার শরীরে ছররা গুলির অসংখ্য চিহ্ন পাওয়া যায়।

নিহত আবু সাঈদ (২২) রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলন সমন্বয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।

তার ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে দেখা যায়, একদিন আগে তিনি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আদনান আবিরকে উদ্ধৃত করে তিনি লিখেছেন, ‘যদি আজ শহিদ হই, তবে আমার নিথর দেহটা রাজপথে ফেলে রাখবেন। ছাত্রসমাজ যখন বিজয় মিছিল নিয়ে ঘরে ফিরবে, তখন আমাকেও বিজয়ী ঘোষণা করে দাফন করবেন। একজন পরাজিতের লাশ কখনও তার মা-বাবা গ্রহণ করবে না।’

গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই) ১২টা ৩৭ মিনিটে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন আবু সাঈদ। স্ট্যাটাসে সংযুক্ত ছবিতে ছিল গণঅভ্যুত্থানে শহীদ শামসুজ্জোহার করা একটি বিখ্যাত মন্তব্য। মন্তব্যটি ছিল এমন– আজ আমি ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত। এরপর কোনো গুলি হলে আমার ছাত্রদের গায়ে লাগার আগে যেন আমার গায়ে লাগে।

শহীদ শামসুজ্জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন তিনি।

শহীদ শামসুজ্জোহাকে উদ্দেশ করে বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘স্যার! এই মুহুর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার স্যার! আপনার সমসাময়িক সময়ে যারা ছিল, সবাই তো মরে গেছে কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি, আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।

স্ট্যাটাসে আবু সাঈদ আরও লেখেন, এই প্রজন্মে যারা আছেন, আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে একসময় মারা যাবেন। কিন্তু যতদিন বেঁচে আছেন, মেরুদণ্ড নিয়ে বাঁচুন। ন্যায্য দাবিকে সমর্থন জানান। রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাঁড়ান। তাহলে প্রকৃত সম্মান ও শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। আজন্ম বেঁচে থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে।

স্ট্যাটাসের শেষে আবু সাঈদ জুড়ে দেন এই বাক্যটা– অন্তত একজন ‘শামসুজ্জোহা’ হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের।