ক্যাম্পাসগুলোতে কোণঠাসা ছাত্রলীগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অবস্থান

ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগরসহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ। মূলত, সোমবার আন্দোলনরতদের ওপর নির্বিচার হামলা চালানোর পর শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ছাত্রলীগ।

মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ধীরে ধীরে আরও ফুটে উঠতে থাকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পালিয়ে যাওয়ার খবর আসে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মূল ফটকে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কাগজ সাটিয়ে দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গলবার রাত বাড়তে থাকলে কোণঠাস হয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসে আন্দোলনরতদের আধিপত্য বাড়তে থাকে।

যদিও মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়েছিল ছাত্রলীগ। একই সময়ে রোকেয়া হলসহ শহীদ মিনার এবং আশপাশে আন্দোলনরতরা অবস্থান নেয়। ছাত্রলীগও শাহবাগসহ অন্যান্য জায়গাও অবস্থান নেয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। কিন্তু আন্দোলনরতদের তুলনায় ছাত্রলীগের উপস্থিতি কম ছিল। যে কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রতিরোধের মুখে অনেকটা ক্যাম্পাস ছাড়া হয়ে যায় ছাত্রলীগ।  হলগুলোর নিয়ন্ত্রণও তারা হারাতে থাকে।

এমনকি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থল এবং হল তল্লাশি করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান নিয়ে আছে। ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।

ছাত্রলীগ নীরব ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। সোমবার রাতভর বহিরাগতদের ডেকে এনে আন্দোলনরতদের ওপর হামলা নির্যাতনের পর প্রতিরোধের মুখে পড়ে ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের হাতে লাঠিসোটা দেখা যায়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও সেখানে প্রতিরোধের মুখে টিকে থাকতে বেগ পেতে হচ্ছে ছাত্রলীগকে। আর সোমবার থেকেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে কোণঠাসা করে রাখে। মঙ্গলবারও এ পরিস্থিতি বজায় ছিল।

মঙ্গলবার দিনভর ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও পুলিশের হামলায় সারাদেশে ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকায় দুইজন, চট্টগ্রামে তিনজন ও রংপুরে একজন। এছাড়া আহত হয়েছেন অনেকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর হামলায় মঙ্গলবার ছয়জন নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতারা ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস থেকে সরে যেতে নির্দেশ দেন। প্রথমে ছাত্রলীগকে হামলার জন্য উস্কানি দিলেও পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় ছাত্রলীগের। যা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আশা করেনি। মূলত আন্দোলনরতদের প্রতিরোধের মুখেই ছাত্রলীগকে সরে যেতে হয়।

তারা বলছেন, বহিরাগতদের ডেকে এনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা মেনে নিতে পারেনি।  এ কারণে তারা মার খাওয়ার পরও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। একইসঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা ছাত্রলীগের নিপীড়ন-নির্যাতনেও অতিষ্ঠ ছিল ছাত্রছাত্রীরা। এবার তারা আর হেরে যেতে চায়নি। ফলে ছাত্রলীগ কার্যত ক্যাম্পাস ছাড়া হয়ে আছে।