একটি ঠান্ডা মাথার খুন

নাম তার আবু সাঈদ (২২)। পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছোট ছেলে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। দরিদ্র পরিবারেরর সন্তান। নয় ভাইবোনের মধ্যে তিনিই নিজের ইচ্ছায় লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অভাবের কারণে অন্য সন্তানদের লেখাপড়া করাতে না পারে না তার পরিবার। কিন্তু সাঈদ খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। এরপর রংপুর সরকারি কলেজ থেকে একই ফলাফল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। দিনমজুর বাবার আশা ছিল চাকরি পেয়ে পরিবারের দেখভাল করবেন সাঈদ। কিন্তু মঙ্গলবার পুলিশ ঠান্ডা মাথায় সাঈদকে খুন করে। একটি পরিবারেরর সমস্ত স্বপ্ন নিঃশেষ হয়ে যায়। 

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ হামলা চলায়। মঙ্গলবার এর প্রতিবাদে সারা দেশে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে সাঈদও অন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অবস্থান নেন। সেখানে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। সড়ক থেকে উঠিয়ে দিতে তাদের দিকে টিয়ারসেল, গুলি ছুড়তে থাকে। কিন্তু বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন সাঈদ। অকুতোভয় সাঈদকে লক্ষ করে গুলি ছুড়ে ঠান্ডা মাথায় খুন করে পুলিশ।

ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের বাধায় অন্যরা সরে গেলেও সাঈদ পুলিশের সামনেই ছিলেন। পুলিশের অবস্থান ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে। তারা গুলি করলেও বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবু সাঈদ। তার হাতে ছিল একটি লাঠি। তিনি সেই লাঠি দিয়ে রাবার বুলেট ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন। পুশের িএক সদস্যকে এ সময় দেখা গেছে একদম কাছ থেকে সাঈদকে লক্ষ করে গুলি ছুড়তে। পয়েন্ট ব্লাঙ্ক অবস্থান থেকে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। শরীরে গুলি লাগলেও দাঁড়িয়ে ছিলেন সাঈদ। তবে এক সময় সরে যান। ফুটপাতে উঠে বসে পড়েন। এ সময় আন্দোলনকারী একজন দৌড়ে আসেন এবং ‘গুলি লেগেছে’ এ রকম কথা শোনা যায়। এরপর অন্যরা এসে তাকে ধরাধরি করে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। 

নিহতের ছোট বোন সুমির আর্তনাদে আকাশ বাতাশ ভারী হয়েছে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, হামার ভাইকে ওরা মেরে ফেলল ক্যান? হামার ভাই বেঁচে থাকলে হামার স্বপ্ন পূরণ হতো। 

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হৃদয় রঞ্জন রায় বলেন, মেডিকেলের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তির আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে তার শরীরের একাধিক স্থানে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। 

বুক চেতিয়ে আবু সাঈদের দাঁড়ানোর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাকে শহীদ বলে ডাকা হয়।