ছাত্রলীগের দখল ফিরিয়ে আনতেই কি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হলও খালি করতে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এমন এক সময়ে এ সিদ্ধান্ত এল যখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলন রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলো। ছয়টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল রাজপথে। মঙ্গলবার পুলিশ-ছাত্রলী-যুবলীগের ত্রিমুখী আক্রমণে ছয় আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় যখন আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে এল, তখন বন্ধের ঘোষণা এল। 

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সোমবার বহিরাগতদ সন্ত্রাসীদের দিয়ে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাথীদের ওপর হামলা করে। যা প্রতিরোধে সক্ষম হয় আন্দোলনকারীরা। মূলত এরপর থেকে ছাত্রলীগ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল হারাতে থাকে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ দিন ছয়জন নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগের জন্য পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যায়। 

রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোমবার গভীর রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ভিসির বাসভবনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় পুলিশও সেখানে উপস্থিত ছিল। তবে ছাত্ররা হল থেকে বেরিয়ে সেই হামলা প্রতিহত করে। এরপর থেকে জাহাঙ্গীরনগগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের অবস্থান হারায় ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে এমন লিখে দেওয়া হয় যে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ। মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ধাওয়া দেওয়া হয়। হলগুলো থেকে তাদের বের করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি হল ছাত্রলীগ মুক্ত হয়। রোকেয়া হল থেকে ছাত্রলীগ নেত্রীদের বের করে দেওয়া হয়। কিছু হল ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ঘোষণা করা হয়। 

তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা এল, যখন ক্যাম্পুসগুলো আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। যেদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা মঞ্জুরী কমিশনের সদিচ্ছা থাকত, তাহলে তারা সোমবার ছাত্রলীগের নির্মম হামলার পরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধের ঘোষণা দিতে পারত। তাহলে হয়তো ছয়টি প্রাণের অকাল মৃত্যু ঘটত না। 

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, ইউজিসি সায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের এখতিয়ার রাখে না। তারা নিজেদের আইনি ক্ষমতার বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। আর এমন সময় সেটা দিয়েছ যখন আসলে ছয়জন নিহত হয়ে গেল, হল এবং ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্ররা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল। 

ছাত্ররাজনীতিতে যুক্তরা বলছেন, আন্দোলন যে পর্যায়ে চলে গেছে, তাতে ছাত্রলীগের পক্ষে হল ও ক্যাম্পাসের দখল আবার ফিরে পাওয়া মুশকিল ছিল। কিন্তু হল খালি করে দেওয়ার নির্দেশের ফলে তারা এখন সহজেই আবার দখল কায়েম করতে পারবে। কারণ পুলিশ ও প্রশাসন তাদের পক্ষে। এখন সাধারণ ছাত্ররা হল ছেড়ে দিলেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা থেকে যাবে। আবার যখন স্বাভাবিকভাবে হলগুলো খুলে দেওয়া হবে, তখন ছাত্রলীগই দখলে রাখতে পারবে। আন্দোলনের তেজ ততদিনে কমে আসবে। ছাত্ররা সহজে সংগঠিত হতে পারবে না। ধীরে ধীরে সেই পুরোনো ছাত্রলীগ আবার সব কিছু দখলে নিয়ে নেবে। 

ছাত্রনেতাদের দাবি, ছয়টি মৃত্যুর পর হল বন্ধ ঘোষণা তাদের সঙ্গে উপহাস করা। কর্তৃপক্ষের এত দরদ থাকলে সোমবার রাতেই হল ভ্যাকেন্ট করতে পারত। ছাত্রলীগ যখন হামলা চালায় তখন, তখন পুলিশ-প্রশাসনকে কোথাও দেখা যায় না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন প্রতিরোধ গড়ে তোলে তখন তারা একসঙ্গে এসে হাজির হয়।