জাবিতে পুলিশের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বুধবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন সড়কে পুলিশের ছোড়া গুলি, টিয়ার শেল, ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটপাটকেলে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন। আহত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া দেওয়া হয়েছে। ২৫ জনের মতো গুরুতর আহত হওয়ায় সাভারের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সংবাদ সংগ্রহের সময় দৈনিক প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে লাঠি ও বন্ধুকের বাট দিয়ে পিটিয়েছে পুলিশ। কয়েকদফা মারের পর ছুটে পালানোর সময় মামুনের দিকে ইট ও গুলি ছোড়ে পুলিশ।
আহত ওই সাংবাদিক এবং প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে আহত কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবাসে করে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় পুলিশ মুরাদ চত্বর এলাকায় গেলে গাড়ি আটকে গাড়ির জানালা দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে এলোপাতাড়ি ঘুষি ও বন্দুকের বাট দিয়ে আঘাত করতে থাকে পুলিশ। তখন ভিডিও করার সময় আব্দুল্লাহ আল মামুনের উপর লাটি নিয়ে হামলা করে পুলিশ। এলোপাতাড়ি ঘুষি ও চড় মারতে থাকে। একপর্যায়ে মামুন দৌড়ে পালিয়ে যেতে থাকলে পুলিশ তার দিকে ইট ও গুলি ছোড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় চিকিৎসাকেন্দ্রের উপপরিচালক মো. রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ‘ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন। অন্তত ৬ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হওয়ায় তাদেরকে সাভারের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
তবে এনাম মেডিকেল সূত্রে প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তির তথ্য পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এর আগে, সকাল ১০টায় এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদেরকে (বুধবার) বিকেল চারটার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলগুলো থেকে বিক্ষোভ নিয়ে এসে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে জড়ো হয়। বেলা সাড়ে বারোটায় ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলমসহ প্রশাসনিক বডির অন্যান্য সদস্যদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এরপর দুপুর একটা থেকে হল ত্যাগের নির্দেশ অমান্য করে মুখোমুখি অবস্থান করছিলেন কোটা সংস্কারে আন্দোলনরত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও পুলিশ। শিক্ষার্থীরা সংখ্যায় ছিলেন প্রায় ২ হাজার। মুখোমুখি অবস্থান করছিলেন শতাধিক পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বাইরেও শতাধিক বিজিবি অবস্থান করছিলেন। বিকেল পৌণে পাঁচটায় আরও শতাধিক মোতায়েন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে। বিকেল পাঁচটা ১০মিনিটে শিক্ষার্থীদের হলে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে শিক্ষার্থী পুলিশকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বলেন। একপর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে পুলিশের দিকে। বিকেল ৬টায় আরও শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এসময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল, গুলি আর সাউন্ড গ্রেনেডে পিছু হটে যায় শিক্ষার্থীরা।
পুলিশের সহায়তায় কার্যালয় ছেড়ে পালান উপাচার্য: প্রায় দুই ঘন্টা সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে উপাচার্য অধ্যাপক ড নূরুল আলমসহ বিভিন্ন হলের প্রধ্যক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রেজিস্ট্রার ভবন থেকে পালিয়ে যান। উপাচার্য পালিয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের উদ্দেশে গালিগালাজ করতে থাকে। উপাচার্য রেজিস্ট্রার ভবন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ সন্ধ্যা সোয়া ৭টা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়। পরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় গিয়ে জড়ো হন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা
সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা তাদেরকে অনেক সময় ধরে বুঝিয়েছি। তারা চাইলে হলে ফিরে যেতে পারত। কিন্ত তারা না করে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আমরা বাধ্য হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছি।’