আবু সাঈদকে গুলির নির্দেশদাতা সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী, দুর্নীতিবাজ পুলিশ কমিশনার মনির

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার নির্দেশদাতা রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মনিরুজ্জামান।
দ্য মিরর এশিয়ার অনুসন্ধান বলছে, আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে চাকরি পাওয়া মনির হাজার কোটি টাকা উপার্জন করেছেন দুর্নীতির মাধ্যমে।

মঙ্গলবার রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলাকালে পুলিশের উপস্থিতির মধ্যেই বুক চিতিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন আবু সাঈদ। সেদিন আন্দোলন দমাতে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছিল। পরিস্থিতি সামলাতে ছাত্রদের ওপর গুলি করার নির্দেশনা দেন মনির। যিনি গত ১৮তম বিসিএসে পুলিশে চাকরি পেয়েছেন।

চাকরি পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে পুলিশ অফিসারদের প্রমোশন ও বদলি বাণিজ্য করেন। বিগত ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৭০ জন বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে গুম করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

পুলিশ সদর দপ্তরে থাকা অবস্থায় সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহিদুল হকের আনুগত্য লাভ করেন মনির। আইজিপি শহিদুল হকের দুর্নীতির ‌‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী মনির।

ছাত্রলীগের আদর্শের পুলিশ অফিসার হিসেবে তিনি বিভিন্ন হত্যা ‘ভিন্নখাতে নিতে’ স্থানীয় পুলিশদের নির্দেশনা দিয়েছেন। জাপানী নাগরিক হত্যাকাণ্ডে হাবিবুন নবীর পরিবারের সদস্যদের বেআইনিভাবে আটক করে রাখা হয়। তিন মাস বিনাবিচারে জেলে বন্দী করে রাখার তিন মাস পরে পুলিশ ‘আসল’ হত্যাকারীকে গ্রেফতার দেখায়। পুরো ঘটনার নির্দেশনায় ছিলেন এই মনির।

অভিযোগ রয়েছে, ‘হেডকোয়ার্টার কানেকশনের’ প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৩০০ পুলিশ কর্মকর্তার পদোন্নতি আটকে দেন মনির। আইজিপি শহিদুল হকের আমলে সদর দপ্তরে চার বছর ‘স্পেশাল অ্যাফেয়ারস অ্যান্ড কনফিডেন্সিয়াল উইং’র দায়িত্বে ছিলেন। অর্থ লেনদেন সাপেক্ষে মনিরের নির্দেশনায় পুলিশের পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড (পিপিএম, বিপিএম) দেয়া হতো।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হয়েছেন গত মঙ্গলবার। ২২ বছরের আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সাঈদ। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সাঈদের আহত হওয়ার পুরো দৃশ্য ধারণ করেছে একাধিক গণমাধ্যম। যমুনা টেলিভিশন এ ধরনের একটি ভিডিও প্রচার করেছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবেও কেউ কেউ ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। ভিডিও থেকে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময়ের পরিষ্কার একটি চিত্র পাওয়া যায়। সংঘর্ষ শুরু হলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সবার আগে ছিলেন আবু সাঈদ। অন্যরা একটু পেছনে ছিলেন। আবু সাঈদের ঠিক সামনে অবস্থান ছিল পুলিশের। পুলিশের অবস্থানের জায়গাটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে। গুলি করেছেন পুলিশের সদস্যরাই। সেই গুলিতেই নিহত হন সাঈদ।