জনগনের বিপক্ষে নামতে নারাজ, জুনিয়র কর্মকর্তাদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন!

সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে। সামরিক বাহিনীর বড় একটি অংশ সরাসরি জনগনের বিপক্ষে নামতে নারাজ। এই অংশ সরকারের আন্দোলন দমনে সরকারের নির্দেশ মানতে নারাজ। মাঠ থেকে পুলিশ প্রত্যাহার চায় সামরিক বাহিনী তারা। শনিবার বিকালে সেনাবাহিনীর প্যাড ও লগো ব্যবহার করে লিখা একটি চিঠি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে। 
 
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, "শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নয়, সমগ্র দেশের সবচেয়ে শক্ত শিরদাঁড়া যাদের, সেনাবাহিনীর জুনিওর অফিসার্স তাদের পক্ষ থেকে বলছি। সবুজে মোড়ানো যে ক্যামোফ্লেজড ইউনিফর্ম আমরা পরিধান করছি, সেটা কোনো ঘুষ, কোটা,বা কোনো দালাল মামার পরিচয়ে অর্জন করি নাই। বছরের পর বছর, খেয়ে না খেয়ে, আধো ঘুমে বা রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে প্রশিক্ষন শেষ করে তারপর এই ইউনিফর্ম গায়ে পড়েছি। যৌবনের ওই সময়টাতে সবকিছু বিসর্জন দিয়েছিলাম যাতে জাতির সর্বোচ্চ ভরসার জায়গা, এই সেনাবাহিনীর পরিচয়ে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারি।

আজকে দেশের এই পরিস্থিতিতে প্রথমে সেনাবাহিনীর প্রযোজন না থাকলেও, এখন প্রযোজন পড়েছে। নিজ দেশের মানুষ সেনাবাহিনীর কাছে এত আকুতি মিনতি করছে, আর আমরা কিনা এটা নিয়ে কিছুই ভাববো না। নিজ দেশের সেনাবাহিনী থাকতে কেন মানুষ বহির্বিশ্বের সহায়তা চাইবে?

আমাদের প্রশিক্ষন এবং আমাদের কমান্ড চ্যানেল প্রতিনিয়ত আমাদের শেখাচ্ছে, সবার আগে দেশ"। হ্যা। ইউনিফর্ম পড়ার পর থেকে এটাই আমরা লালিত করে আসছিলাম, ভবে শুধু মনের ভেতরে। বাহিরে আমাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে দেশ ও জনগনের বিরুদ্ধে নয়ভবা পুতুল হয়ে কাজ করতে। দীর্ঘ বছর ধরে এভাবেই চলছি। কিন্তু আর না, সময় এসেছে। কমান্ড চ্যানেলের প্রতি আমাদের অত্যন্ত বিনয়ী আবেদন, এই পরিস্থিতিতে আমাদের ওপর কোনো প্রকার অন্যায়ের আদেশ দিবেন না। আমরা বৈধ দাবি নিয়ে রাস্তায় নামা সাধারন ছাত্রজনতা এবং দেশের সকল সাধারন মানুষের পাশে একাত্মতা ঘোষনার মাধ্যমে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে চাই। একটা বুলেট যদি ভুল করে হলেও সাধারণ নিরপরাধ মানুষের গায়ে লাগে, বা লাঠির আঘাত করা হয় তবে এই সেনাবাহিনী পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।

গণতান্ত্রিক একটা দেশকে যারা সকল প্রকার যোগাযোগ ব্যাবস্থা থেকে ৩০ ঘন্টার বেশি সময় ধরে বিচ্ছিন্ন করেছে, সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকে হরন করেছে, এবং ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলনে আসা সাধারন মানুষের ওপর দেখামাত্র গুলি চালানোর আদেশ দিয়েছে, তারা এই জাতির নেতৃত্বাসনে থাকার যোগ্য নয়।

আমরা রাজনৈতিক কোনো দল বুঝি না, ইতিহাসের গৌরবময় সকল সেনাবাহিনীর মত আমরাও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত, ন্যায়ের পক্ষের সেনাবাহিনী হিসেবে থাকতে চাই।"

এই চিঠিতে কারো স্বাক্ষর না থাকলেও সামরিক বাহিনীর জুনিয়র কর্মকর্তাদের উদ্যোগে এই চিঠি প্রচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, এই চিঠি প্রকাশের পর সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিভাজন আরো স্পষ্ট হয়ে গেছে। 

এদিকে শনিবার সামরিক বাহিনী মাঠে নামলেও সেনা সদস্যরা যথেষ্ট সংযত আচরণ করেছে। কারফিউ ভঙ্গ করে মানুষ বিক্ষোভ করলেও সেনাবাহিনীকে কোথাও তেমন মারমুখী অবস্থায় দেখা যায়নি।