মৃতের কোনো হিসাব নেই, বড় হাসপাতালগুলোর ডেথ রেজিস্টার নিয়ে গেছে গোয়েন্দারা

ঢাকার এক হাসপাতালে নিহত চার শিক্ষার্থীর ছবি। ছবি: সংগৃহীত।

ঢাকা শহরে গত কয়েকদিনে আইন শৃংখলাবাহিনী ও ছাত্রলীগ, যুবলীগের হামলায় কত মানুষ মারা গিয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। বিভিন্ন হাসপাতালের মৃতদেহ তালিকাভূক্ত করার খাতা নিয়ে গেছে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। দ্য মিরর এশিয়ার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।

দ্য মিরর এশিয়ার একাধিক সংবাদদাতা সোমবার ও মঙ্গলবার ঢাকার প্রধান প্রধান হাসপাতালগুলোতে অনুসন্ধান করে মৃতের সংখ্যা সম্পর্কে একটি ধারনা  নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এসব হাসপাতালের কুইক রেসটন্স টিম ও মর্গের কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানার চেষ্টা করেছে গত কয়েক দিনে কতগুলো মৃতদেহ হাসপাতালে এসেছিল। নিরাপত্তা জনিত কারণে হাসপাতালের এসব কর্মীদের নাম দ্য মিরর এশিয়া প্রকাশ করছে না। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কুইক রেসপন্স টিম ও মর্গের কর্মীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার ৩৭০টি মরদেহ আনা হয়। এর বাইরেও আরো মরদেহ এসেছে। কিন্তু ওইগুলো হাসপাতালেে উপস্থিতি আইন শৃংখলা বাহিনীর লোকজন তালিকাবদ্ধ করতে দেয়নি। বরং খাতা নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাসপাতালের পরিচালকের মাধ্যমে। ঢাকা মেডিকেলের মর্গে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ৫০ মরদেহ ছিল। কিন্তু এই মরদেহগুলো শনাক্ত করতে কেউ আসেনি। 

ঢাকা মেডিকেলে ৮, ৯ ও ১২ বছরের তিনটি শিশুর মৃতদেহ এসেছিল যাত্রাবাড়ী থেকে। এর মধ্যে ৮ বছরের নিহত শিশুর পরিবার জানিয়েছে, এই শিশুগুলো ঘরের ভিতরেই ছিল। উপরে থেকে ও বাইরে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের গুলিতে তারা ঘরের মধ্যেই নিহত হয়। এর মধ্যে ৮ বছরের শিশুর মায়ের বাম হাতের কিছু অংশ গুলিতে উড়ে গেছে। এরা কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি পুলিশি হয়রানির ভয়ে। 

মিটোফোর্ড হাসপাতালে ৪৫০টি মৃতদেহ তালিকাবদ্ধ করা হয়েছিল। পরে সরকারি বাহিনীর লোকজন আর তালিকাবদ্ধ করতে দেয়নি। সেখানে থেকেও তালিকাবদ্ধ করার খাতা নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে দায়িত্বরত একজন কর্মী দ্য মিরর এশিয়াকে জানিয়েছে, এত মরদেহ এসেছিল যে আমাদের এখানে রাখার জায়গা ছিল না। ফলে মরদেহগুলো স্তুপ করে রাখা হয়। এদের অধিকাংশের বয়স ১৫-৩০ এর মধ্যে।

উত্তরার কুয়েত মৈত্রি হাসপাতালে একদিনেই মৃতদেহ এসেছিল ৬০টি মত। এরপর ওই হাসপাতালের দায়িত্বরত আর হিসাব রাখতে পারেননি। যাত্রাবাড়ীর অনাবিল হাসপাতালে ৩৯টি মরদের এসেছে আইন শৃংখলাবাহিনীর হামলা চলাকালে।  

মুগদা জেনারেল হাসাপাতলে মৃতদেহগুলোর কোনো তালিকাই করা হয়নি। ফলে গত কয়েকদিনে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলা কত মানুষ নিহত হয়েছে এর কোনো সঠিক হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন হিসাবে ২০০ থেকে ৩০০ জন নিহত হওয়ার কথা বলা হলেও প্রকৃত নিহতের সংখ্যা কয়েকগুন বেশি বলে হাসাপতালে দায়িত্বরতরা আশংকা করছেন।