সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলন দমনে বলপ্রয়োগ ও তার সুযোগে স্বার্থান্বেষী সহিংস মহলের অপতৎপরতা যুক্ত হয়ে সংঘটিত অভূতপূর্ব প্রাণহানি ও ভয়াবহতাকে সুশাসনের প্রকট ঘাটতির নির্মমচিত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

ভিন্নমত ও আন্দোলন অপরাধ নয়, সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে চলমান সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের বলপ্রয়োগপূর্বক দমন না করে ন্যায্য দাবি মেনে নিতে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জার্মানির বার্লিন ভিত্তিক সংস্থাটি।

একই সঙ্গে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সকল সমন্বয়কের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে দাবিসমূহের কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে রোডম্যাপ প্রণয়নেরও আহ্বান জানায় টিআইবি।

সরকারি চাকরিতে শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে অভূতপূর্ব সহিংসতায় রূপান্তরের ফলে এখন পর্যন্ত দু’শ-র বেশি প্রাণহানির ঘটনা গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ভিন্নমত, সমাবেশ, প্রতিবাদ ও দাবি আদায়ের আন্দোলনের অংশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার অধিকার দেশের জনগণকে সংবিধান দেয়-বিষয়টি নিজেকে গণতান্ত্রিক দাবি করা সরকারকে মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, এর চেয়ে হতাশাজনক আর কী হতে পারে!

তিনি বলেন, আমরা একটি ধ্বংযজ্ঞের ভয়াবহতার সাক্ষী হলাম, যা সুশাসন ও জবাবদিহি ব্যবস্থার প্রকট ঘাটতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরছে। একইভাবে উদ্বেগজনক হলো, গণমাধ্যমে এমন বহু শিশু-কিশোরসহ সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা উঠে আসছে, যারা আন্দোলনরত ছিলেন না।

পুলিশের ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক’ ছোড়া গুলিতে হত্যার পাশাপাশি নিজের বাড়িতে বা ছাদে দাঁড়িয়ে গুলিতে নিহত হওয়া সকল মৃত্যুর পিছনে যারা দায়ী, তাদের বিচার হবে কিনা, প্রশ্ন তুলেছে টিআইবি।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়েছে, ফিরে আসা নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের অনেকের বক্তব্যেও তা স্পষ্ট।

ড. জামান বলেন, মতপ্রকাশের অধিকার, প্রতিবাদ ও ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনকে কার্যত অপরাধ হিসেবে রূপান্তর করে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আপামর জনগণের বাক-স্বাধীনতার জন্য ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে-এমন মন্তব্য করা মোটেও অত্যুক্তি হবে না।

সহিংসতার অভিযোগে যেভাবে ঢালাও মামলা ও গ্রেফতার চলছে, তা কতোটা আইনি প্রক্রিয়া মেনে করা হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে টিআইবি বলছে, ‘এটি যেন কোনোভাবেই নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও  গ্রেফতার উৎসবে পরিণত না হয়’।

বিক্ষোভ বা আন্দোলন দমনের হাতিয়ার হিসেবে ইন্টারনেট বন্ধ করাকে সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, একটি ডেটা সেন্টারে হামলার অজুহাত দিয়ে যেভাবে পুরো দেশবাসীর ডিজিটাল অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।