গণমাধ্যমের উপর প্রচণ্ড চাপ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ক্ষুদে বার্তায় নির্দেশনা দিচ্ছেন কিভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে হবে 

দ্য মিরর এশিয়ার ঢাকা সংবাদদাতা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খানকে বৃহস্পতিবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এছাড়া একাধিক সাংবাদিকদের বাসায় বুধ ও বৃহস্পতিবার সাদা পোশাকের পুলিশ গিয়েছিল। দেশে এই মুহূর্তে গণমাধ্যমের উপর প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। 

ঢাকা থেকে আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২ টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল সাঈদ খানকে মগবাজার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। ওয়াইফাই ঠিক করতে এসেছি বলে তারা বাসায় দরজা খুলতে বলা হয়। সাঈদ খানের ছেলে দরজা খুলে দিয়ে হুরমুড় করে ১৫/১৬ জনের একটি দল ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে সাঈদকে ধরে নিয়ে যায়। এ সময় সাঈদ খানের স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে গোয়েন্দা পুলিশের লোকজন। 

সকাল ১০ টায় সাঈদ খানের স্ত্রী মিন্টো রোড গোয়েন্দা অফিসে গেলে জানানো হয়  এই নামে কাউকে আটক করা হয়নি। তবে গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে সাঈদ খানকে গোয়েন্দা হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ও নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য প্রদানের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে হয়ে বলে গোয়েন্দা পুলিশের ওই সূত্রটি জানায়।

বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিক গণমাধ্যম কর্মীর বাসায় গোয়েন্দা পুলিশ হানা দিয়েছিল বলে জানা গেছে। ওই সাংবাদিকদের বাসায় না পেয়ে আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চলে যায পুলিশ। 

ঢাকার সূত্রগুলোর জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে ঢাকার গণমাধ্যমের উপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। ঢাকার প্রকৃত চিত্র যেন গণমাধ্যমে না আসে সেই উদ্দেশ্যে সামরিক গোয়েন্দোদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে চাপে রাখা হয়েছে। সারাদেশের শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে এবং সহিংসতা শব্দটি না লেখার জন্য সামরিক গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গনমাধ্যম কর্মীদের। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান বিভিন্ন সাংবাদিককে সংবাদ প্রচারের ধরণ সম্পর্কে ক্ষুদে বার্তা দিচ্ছেন। 

এ ধরনের কয়েকটি ক্ষুদেবার্তা দ্য মিরর এশিয়ার হাতে এসেছে। একটি ক্ষুদে বার্তায় তিনি বলেছেন, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোটার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামাতে চাচ্ছেন।  সকল হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের অঙ্গীকার করেছেন। নিহতদের পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসনের তিনি ব্যবস্থা করবেন। এই কথাগুলো জনসাধারণের কাছে পৌছাতে হবে আমাদেরকেই, মিডিয়াকেই।"

শুক্রবার পাঠানো আরেকটি ক্ষুদে বার্তায় তিনি বলেন, আমাদের আশংকা জুম্মা'র নামাজের পর মারামারি, ভাংচুর, সহিংসতা ইত্যাদি বাড়তে পারে। এসময় সতর্ক ও দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনা কে কতটা করতে পারেন, তার বিনীত অনুরোধ করছি। আজকের দিনের দ্বিতীয়ার্ধ সংকট নিরসনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়।

ঢাকায় গণমাধ্যমের উপর চাপের বিষয়টি কূটনৈতিক মহলেও আলোচনা হচ্ছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন ভয়ংকর রকমভাবে সংকোচিত হয়ে আছে। 

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সারাদেশে ৪ জন সাংবাদিক পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আটক হাওয়ার ভয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকই আত্মগোপনে চলে গেছেন।