নুরুল হক নূরকে রিমন্ডে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ 

রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নূরকে শুক্রবার আদালতে হাজির করা হয়। নুরুল হক নূরকে রিমন্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আদালত নূরকে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দিয়েছে। 

মহাখালী সেতু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বনানী থানার মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার আদালতে তোলা হয় গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূরকে। এ সময় আদালতে দ্যাড়াতেই পারছিলেন না তিনি।

নূরের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন রিমান্ডে নিয়ে নূরকে কে নির্যাতন করা হয়েছে। শারীরিক অবস্থা ও সার্বিক বিবেচনায় এ সময় জামিন চান তার আইনজীবী। তবে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহাম্মদ নূরের জামিনের আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নুরের স্ত্রী মারিয়া আক্তার লনা ও বাবা ইদ্রিস হাওলাদার আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তারা নূরের ওপর নির্যাতন বন্ধের আহবান জানান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া রিমান্ড ফেরত তার প্রতিবেদনে বলেন, নুরকে আদালতের নির্দেশনা মেনে ব্যাপক ও নিবিড়ভাবে মামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদকালে আসামি জানায়, গত ৫ জুন সরকারী চাকুরীতে কোটা সংক্রান্তে আদালতের রায়ের পর থেকেই সে তার ঘনিষ্ঠ নাহিদ ইসলাম, নাসানাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদ, আক্তার হোসেন এবং আহনাফের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পরে ১৮ জুলাই রাত ১০ টায় নাহিদ ইসলাম এবং সারজিস আলমের সাথে  মুঠোফোনে ও ক্ষুদেবার্তায় সরকারী চাকুরীতে কোটা সংস্কার এবং বর্তমান সরকারকে উৎখাত বা পতনের জন্য তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। তখন নাহিদ ইসলাম ও সারজিস আলম দাবি দাওয়াগুলো ক্ষুদে বার্তায় লিখে দিতে বললে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, ইন্টারনেট সচল করা, ছাত্রলীগ যুবলীগে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ সরকারের পদত্যাগ ইত্যাদি দাবি দাওয়া লিখে দেয় ডিপি নুর। ১৯ জুলাই কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার জন্য তার দলের নেতাকর্মীদের আহবান জানায় এবং বর্তমান সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানায়।

অন্যদিকে মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই প্রতিদিনের মতো সেতু ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথারীতি অফিসের কার্যক্রম করতে থাকেন। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলানে আশংগ্রহণকারী অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জন আসামি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা করার লক্ষ্যে বেআইনি জনতাবন্ধে আবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা ইটপাটকেল নিয়ে অফিসের সামনে এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।

সেতু ভবনের সিনিয়র সচিবসহ কর্মকর্তাদের পদ-পদবী উল্লেখ করে খোঁজাখুঁজি করে হুমকি প্রদর্শন ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে  ভীতি সৃষ্টি করে। সেতু ভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে আসামিরা অফিসের মূল ফটক ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে সেতু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে নিচতলার ভবনের সামনে থাকা জীপ গাড়ি, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, নিরাপত্তা ভবন, সিসি ক্যামেরা, পাকিং শেড, ক্যান্টিন, গাড়িচালকদের কক্ষ, আনসার শেড, মুজিব কর্নার, জেনারেটর কক্ষসহ মূল ভবন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ ঘটায়। এ সময় ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডে ৩২টি জীপ গাড়ি, ১টি পিকআপ, মিনিবাসসহ আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করে।