কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের দাবি ৩১ সংগঠনের 

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংসতা ও প্রাণহানির পাশাপাশি মিথ্যা মামলা ও নির্বিচারে আটকের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে ৩১টি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন।

'প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের' ব্যানারে গতকাল শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এসব সংগঠনের নেতারা এ দাবি জানান।

সমাবেশে বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো হত্যাকা-ের প্রতিবাদে গান গেয়েছেন ও কবিতা আবৃত্তি করেছেন। সমাবেশ শেষে তারা শোভাযাত্রা বের করেন, যা রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'এই সংখ্যক মৃত্যুদেখে কেউ চুপ করে থাকতে পারে না। চোখ বন্ধ করলেই ওই লাশগুলো দেখতে পাই। আগের বিচারিক তদন্তে আমরা জজ মিয়ার নাটক দেখেছি। তাই আমরা জাতিসংঘের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।'

তিনি বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহতরা চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতালে থেকে আরেক হাসপাতালে গিয়েছেন। হাসপাতালগুলো তাদের চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আমরা এ ধরনের স্বাস্থ্যব্যবস্থার নিন্দা জানাই।'

হত্যাকা-ের জন্য দায়ী মন্ত্রীদের পদত্যাগ, ক্যাম্পাসে নোংরা রাজনীতি বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি রিজওয়ানা হাসান।

সমাবেশে দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু সরকার আন্দোলন দমনের জন্য শক্তি প্রয়োগ করে, যার ফলে অসংখ্য লোক মারা যায়। এত বিপুলসংখ্যক মৃত্যুর পরও সরকার দুঃখ প্রকাশ করেনি।'

প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সাম্মানিক নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন জানান, তারা নিহতের প্রকৃত সংখ্যা জানতে পারছেন না। 

তিনি বলেন, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা জানার অধিকার আমাদের আছে। সরকারের বক্তব্য দেখে মনে হচ্ছে, তারা জীবনের চেয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নিয়ে বেশি চিন্তিত। সম্পদ কি জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যবান।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘দেশ এখন স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে হাজারো মানুষ আহত হয়েছে। এতে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হন। এসব হত্যাকা-ের দায় সরকারকেই নিতে হবে।’ নিহতরা যাতে ন্যায়বিচার পান, তা নিশ্চিতের দাবিও জানান তিনি।