প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিবৃতি

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-নীপিড়ন এবং দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।

এই ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বিবৃতি দিয়েছেন।

এসব ‍বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ নাগরিকদের ওপর ফ্যাসিস্ট এবং কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বারা সংঘটিত অত্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাই। কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলা করা হয়েছে। এই হামলায় এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিককে। দেশে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশকে পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বাক স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা ও তথ্য প্রাপ্তির অধিকারসহ প্রায় সবধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। সরকার যে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধের সামিল। আমরা সরকারের এই অপরাধের বিচার দাবি করছি।

দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকার বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দেশে সুষ্ঠু বিচার আশা করা যায় না।

বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবির পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর (বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী), এবং পক্ষপাতদুষ্ট সাংবাদিক এবং মিডিয়া হাউসগুলো যারা ভুল ও একপাক্ষিক তথ্য ছড়িয়েছে তাদের বিচারও দাবি করা হয়।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি, নির্যাতন এবং এমনকি হত্যার সঙ্গেও তারা জড়িত। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মনে করছে তাদের কখনই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে না। আমরা তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।

শেখ হাসিনাকে একজন স্বৈরশাসক উল্লেখ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে তার সরকারকে জবাবদিহি করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদের নাগরিক অধিকার, গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচারের জন্য লড়াইয়ে সমর্থন করার কথা জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো তুলে ধরার জন্য এবং ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার অর্জনে সংগ্রামরতদের কণ্ঠস্বরকে প্রচারে আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতি দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ইউনিভার্সিটি, ওহাইও স্টেইট ইউনিভার্সিটি, ওকলাহোমা স্টেইট ইউনিভার্সিটি, পেনসিলভানিয়া স্টেইট ইউনিভার্সিটি, পারডু ইউনিভার্সিটি, রেনসেলার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, স্টেইট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ জার্সি, টেম্পল ইউনিভার্সিটি, ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া, সেন্ট জোসেফ ইউনিভার্সিটি, ভিলানোভা ইউনিভার্সিটি, টেক্সাস স্টেইট ইউনিভার্সিটি, টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ আলাবামা, ইউনিভার্সিটি এট আলবানি (স্টেইট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক), ইউনিভার্সিটি অফ আরকানসাস, ফায়েতিভিল, ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা, ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস, আমহার্স্ট, ইউনিভার্সিটি অফ মিসৌরি কলম্বিয়া, ইউনিভার্সিটি অফ টেনেসি, নক্সভিল, ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়া, ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় আরবানা শ্যাম্পেইন, ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনা এট শার্লট, ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনা এট গ্রিসবোরো, ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা, ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডা, ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস এট আরলিংটন, ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস এট অস্টিন, ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস এট ডালাস, ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড, কলেজ পার্ক, ওয়েন স্টেইট ইউনিভার্সিটি।