‘আমার ছেলেকে নিরাপত্তার জন্য ডিবি অফিসে আনা হয়েছে, এটা আমরা মানি না। আমি চাই আমার ছেলেকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’

রবিবার বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি অফিসের সামনে সাংবাদিকদের সামনে এ কথা জানান কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের মা মমতাজ বেগম। 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পাঁচ সমন্বয়ক নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। বরিবার নাহিদের পরিবার তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল রাজধানীর মিন্টো রোডে। কিন্তু নাহিদের পরিবারকে মিন্টো রোড থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ডিবি কার্যালয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় নাহিদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মা ছাড়াও ছিলেন দুই ফুপু, এক খালা ও তার স্ত্রী। পরে নাহিদের মা তার ছেলেকে ফিরে পেতে সাংবাদিকদের সামনে আকুতি জানান। তিনি বলেন, ডিবি থেকে বলা হয়েছে চিন্তামুক্ত থাকার জন্য। কিন্তু সন্তান ডিবি কার্যালয়ে, আমি কীভাবে চিন্তামুক্ত থাকি?

তিনি বলেন, সবগুলো ছেলেকে যেন ছেড়ে দেয় তাদের পরিবারের কাছে। আমরা খুব চিন্তায় আছি। যদি তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তাহলে তো পুলিশ হাসপাতালেই তাদের নিরাপত্তা দিতে পারতো।

মমতাজ বেগম বলেন, নাহিদকে হেফাজতে নেয়ার পর এখন পর্যন্ত আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আমার ছেলেকে নিরাপত্তার জন্য এখানে আনা হয়েছে তা আমরা মানি না। আমি চাই আমার ছেলেকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমরা চাই প্রতিটি সন্তানকে তাদের মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক।

তিনি বলেন, এর আগে তুলে নিয়ে নাহিদকে নির্যাতন করা হয়েছে। এখন আবার তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে। আমরা নাহিদের সঙ্গে দেখাও করতে পারিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাহিদকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও দুজনকে তুলে আনা হয়েছে। ডিবি থেকে বলা হয়েছে চিন্তামুক্ত থাকার জন্য এ বিষয়ে নাহিদের মা বলেন, আমরা কীভাবে চিন্তামুক্ত থাকি। সন্তান ডিবি কার্যালয়ে, আমি কীভাবে চিন্তামুক্ত থাকব। আমি আমার সন্তানকে আমার কাছে ফিরিয়ে নিতে চাই। পাঁচজনকে যেন তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

নাহিদের পরিবার তাকে নিয়ে এখন কি আশঙ্কা করছে জানতে চাইলে নাহিদের মা বলেন, আমার প্রশ্ন নাহিদকে এখানে (ডিবিতে) কেন নিয়ে আসবে। নাহিদের শারীরিক অবস্থা ভালো না। এ অবস্থায় তাকে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত নাহিদের এক ফুপু সাংবাদিকদের বলেন, সর্বশেষ আমি নাহিদকে হাসপাতালে দেখে এসেছিলাম। তখন নাহিদের পায়ের ক্ষতগুলো বাজে অবস্থায় ছিল। আমরা নাহিদকে বাড়িতে নিতে চেয়েছিলাম। তখন চিকিৎসকরা বললেন কিছুদিন চিকিৎসার পরে বাড়িতে নিয়ে নিয়েন। নাহিদকে যেদিন ডিবিতে নিয়ে আসা হয় আমাদের পরিকল্পনা ছিল এর পরের দিন নাহিদকে আমরা বাসায় নিয়ে যাব। নাহিদের শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। গায়ে জ্বর ও পায়ে প্রচ- ব্যথা ছিল।

এর আগে দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, যাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা ডিবিতে নিয়ে এসেছি তাদের পরিবারের কাছে অনুরোধ করব দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আমরা মনে করি তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখছি। তাদের পরিবার যেন নিশ্চিন্তে থাকে সে বিষয়ে আশ্বস্ত করতে চাই।

তারও আগে  সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, পাঁচ সমন্বয়কে গ্রেফতার করা হয়নি। তারা ঝুঁকিমুক্ত, এটা পুলিশ মনে করলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেখুন, তারা নিজেরাই বলছিল যে তারা ঝুঁকিতে আছে। তাদের একজন বাবাকে বলছিলেন যে আমি বিশেষ প্রয়োজনে আত্মগোপন করেছি। সেজন্য আমরা তাদের নিরাপত্তার জন্য নিয়ে এসেছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিল, কোন কোন রাজনৈতিক দল কিংবা কারা তোমাদের প্ররোচনা দিয়েছে, পরে যে আন্দোলন সহিংস রূপ নিলো এগুলো আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করছি। এগুলোর উত্তরও তারা দিচ্ছে।