জাতিসংঘের তত্ত্ববধানে তদন্তের দাবি বিশিষ্ট ৭৫ নাগরিকের

 

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে ঘিরে শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক হত্যার বিচার দাবি করেছেন  দেশের ৭৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা বলেছেন, আন্দোলনকালে শিক্ষার্থীসহ শান্তি প্রিয় নাগরিকদের নিহত, আহত ও নির্যাতিত হওয়ার প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হতে হবে। স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে তদন্তের স্বার্থে তা জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে হওয়া জরুরি। তাই তাঁরা জাতিসংঘকে এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছেন।

সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিকেরা’। বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতিতে বলা হয়, গভীরতম বেদনা ও ক্ষোভের সঙ্গে তাঁরা লক্ষ করছেন যে কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ১৬ জুলাই থেকে পুলিশসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল মন্ত্রীর প্ররোচনায় তাঁদের আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্রসংগঠনের সহিংস কর্মীরা নজিরবিহীন দমন–পীড়নের তা-ব চালিয়েছেন। শুরু থেকেই সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও অরাজনৈতিক ছাত্র আন্দোলনকে সরকারি দল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করতে চেয়েছে। 

বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, তাঁরা ছাত্র-জনতা হত্যা ও জনগণের সম্পত্তি বিনষ্টের নাশকতার পিছনে  যেকোনো ধরনের অপরাজনীতির নিন্দা করছেন। সরকারের বল প্রয়োগে কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন কলেজ ও স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রী এবং  খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় হতাহতের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্যও রয়েছেন। হতাহতের তালিকায় সংবাদকর্মীরাও আছেন।

বিবৃতিদাতারা বলেন, তাঁরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন এ কারণে যে তাঁদের আশঙ্কা, সরকারি বাহিনী ও সরকারি দলের সংগঠনগুলোর আক্রমণে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক ব্যাপক, অনেক ভয়াবহ। ইন্টারনেট ও গণমাধ্যমের ওপর সরকারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের কারণে যা তাঁরা জানতে পারছেন না।

বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, এত অল্প সময়ে কোনো একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এমন বিপুলসংখ্যক হতাহতের নজির গত এক শ বছরের ইতিহাসে (মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ বাদ দিলে) এ দেশে তো বটেই, এই উপমহাদেশেও মিলবে না। এমন হত্যাকা-ের নিন্দা বা ধিক্কার ও প্রতিবাদেও উপযুক্ত ভাষা তাঁদের জানা নেই। এই বিপুল প্রাণহানির দায় প্রধানত সরকারের। সাংবিধানিক শপথ ও আইন উপেক্ষা করে সরকারের একাধিক মন্ত্রী যেভাবে চরম দায়িত্বহীন ভাষায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর তাঁদের সমর্থক ছাত্রদের ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানালেন, তাতে সারা দেশ এবং বিদেশে বাংলাদেশের জনগণ ও দেশের শুভাকাঙ্ক্ষীরা স্তম্ভিত, গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ও সামগ্রিকভাবে শিক্ষাঙ্গনকে নিরাপদ, শিক্ষামুখী রাখতে কয়েকটি দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে দেশবাসীকেও কঠিন আত্মপ্রত্যয়ে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা বিশিষ্ট নাগরিকেরা হলেন

১. সুলতানা কামাল, মানবাধিকারকর্মী

২. হামিদা হোসেন, মানবাধিকারকর্মী

৩. খুশী কবির, মানবাধিকারকর্মী

৪. শাহদীন মালিক, আইনজ্ঞ ও সংবিধানবিশেষজ্ঞ

৫. রাশেদা কে চৌধূরী, মানবাধিকারকর্মী

৬. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অর্থনীতিবিদ

৭. হোসেন জিল্লুর রহমান, অর্থনীতিবিদ

৮. আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ

৯. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অর্থনীতিবিদ

১০. মেঘনা গুহঠাকুরতা, মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক

১১. জেড আই খান পান্না, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী

১২. ইফতেখারুজ্জামান, মানবাধিকারকর্মী

১৩. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক

১৪. শিরিন হক, নারী অধিকারকর্মী

১৫. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আইনজীবী

১৬. শামসুল হুদা, মানবাধিকার ও ভূমি অধিকারকর্মী

১৭. বদিউল আলম মজুমদার, গবেষক ও পর্যবেক্ষক

১৮. সারা হোসেন, আইনজীবী

১৯. পারভীন হাসান, অধ্যাপক

২০. গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক

২১. মো. তানজিমউদ্দিন খান, অধ্যাপক

২২. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক

২৩. মুশতাক এইচ খান, অধ্যাপক

২৪. মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক

২৫. ফিরদৌস আজিম, অধ্যাপক

২৬. বীনা ডি কস্তা, অধ্যাপক

২৭. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক

২৮. সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক

২৯. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক

৩০. নোভা আহমেদ, অধ্যাপক

৩১. নাভীদা খান, অধ্যাপক

৩২. স্বপন আদনান, শিক্ষাবিদ

৩৩. দীনা সিদ্দিকী, শিক্ষাবিদ

৩৪. নাসরিন খন্দকার, পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চার

৩৫. সামিনা লুৎফা, সহযোগী অধ্যাপক

৩৬. ফারহা তানজিন তিতিল, সহযোগী অধ্যাপক

৩৭. মাইদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক

৩৮. রিজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা, সহযোগী অধ্যাপক

৩৯. মো. সাইমুম রেজা তালুকদার, জ্যেষ্ঠ প্রভাষক

৪০. সুব্রত চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী

৪১. তবারক হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী

৪২. শুভ্র চক্রবর্তী, মানবাধিকারকর্মী

৪৩. শরীফ ভূঁইয়া, আইনজীবী

৪৪. সাইদুর রহমান, আইনজীবী

৪৫. প্রিয়া হাসান চৌধুরী, আইনজীবী

৪৪. শারমিন খান, আইনজীবী

৪৬. নাসের বখতিয়ার, সাবেক ব্যাংকার

৪৭. আবু সাঈদ খান, সাংবাদিক

৪৮. সাঈদা গুলরুখ, সাংবাদিক

৪৯. সালিম সামাদ, সাংবাদিক ও গণমাধ্যম অধিকারকর্মী

৫০. শারমিন মুরশিদ, মানবাধিকারকর্মী ও পর্যবেক্ষক

৫১. ফস্টিনা পেরেইরা, মানবাধিকারকর্মী

৫২. রুশাদ ফরিদী, মানবাধিকারকর্মী

৫৩. রেজাউল করিম লেলিন, গবেষক ও অধিকারকর্মী

৫৪. নুর খান, মানবাধিকারকর্মী

৫৫. রেজাউল করিম চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী

৫৬. সাদাফ নুর, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী

৫৭. তাসনিম সিরাজ মাহাবুব, মানবাধিকারকর্মী

৫৮. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী

৫৯. রেহেনুমা আহমেদ, লেখক ও গবেষক

৬০. আলতাফ পারভেজ, লেখক ও গবেষক

৬১. আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি ও লেখক

৬২. জাকির হোসেন, মানবাধিকারকর্মী

৬৩. মাহিন সুলতানা, মানবাধিকারকর্মী

৬৪. রোজিনা বেগম, গবেষক ও অধিকারকর্মী

৬৫. বারিশ হাসান চৌধুরী, গবেষক

৬৬. রেজওয়ান ইসলাম, গবেষক ও অধিকারকর্মী

৬৭. জাহানারা খাতুন, মানবাধিকারকর্মী

৬৮. ফজিলা বানু লিলি, অধিকারকর্মী

৬৯. আরিফা হাফিজ, মানবাধিকারকর্মী

৭০. ইশরাত জাহান প্রাচী, অধিকারকর্মী

৭১. দীপায়ন খীসা, মানবাধিকারকর্মী

৭২. হানা শামস আহমেদ, আদিবাসী অধিকারকর্মী

৭৩. মুক্তশ্রী চাকমা, নারী অধিকারকর্মী ও

৭৪. অরূপ রাহী, সাংস্কৃতিককর্মী