জাতিসংঘ  অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে, পদক্ষেপ নিতে পারে

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলরে প্রেক্ষিতে  সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নিবিড় নজর রাখছে জাতিসংঘ। বৈশ্বিক সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য তথপ্রমাণ পেয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতিতে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘ প্রস্তুত বলে জানানো হয়েছে।

সোমবার  মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেছেন। প্রথমে তিনি বাংলাদেশ ইস্যুতে একটি বিবৃতি পাঠ করেন। এরপর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। শুরুতেই বিবৃতিতে তিনি সব ধরনের সহিংসতার দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এর জন্য যারা দায়ী তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

ডোজারিক জানান, শিক্ষার্থীদের আবারও শুরু করা বিক্ষোভের বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরতে অব্যাহতভাবে ঢাকা এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বার্তা পাঠানো হচ্ছে।

ব্রিফিংয়ের শুরুর দিকে পোডিয়াম থেকে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতি পড়ে শোনান ডোজারিক। 
ডোজারিক বলেন, " বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন রয়েছেন মহাসচিব। সোমবার নতুন করে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সম্পর্কে তিনি জেনেছেন। তিনি সকল পক্ষকে শান্ত এবং সংযত থাকার আহ্বান পুর্নব্যক্ত করেছেন। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে ঘিরে যেভাবে হাজার, হাজার তরুণ এবং বিরোধীদলের কর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করা হয়েছে তা নিয়ে বিচলিত জাতিসংঘ মহাসচিব।"

তিনি বলেন, "যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলা, মত প্রকাশ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন মহাসচিব। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা যেভাবে বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য যেসব প্রমাণের খবর প্রকাশ পেয়েছে তাতে শঙ্কিত তিনি।" 

সব ধরনের সহিংসতার ঘটনা দ্রুততা, স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান পুর্নব্যক্ত করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

ডোজারিক বলেন, "বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা এবং নিউইয়র্ক উভয় জায়গায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি অব্যাহতভাবে বলে যাচ্ছি। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসাবে আমরা বাংলাদেশকে মনে করিয়ে দিতে চাই তারা যেন মানবাধিকারকে সম্মান জানায়।"

তিনি আরও বলেন, "জাতিসংঘের লোগো সম্বলিত গাড়ি বিক্ষোভ দমনে আর ব্যবহার করা হবেনা মর্মে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানালেও আমরা একটি বিষয় আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই এবং পুনরাবৃত্তি করতে চাই যে, যেসব দেশ শান্তিরক্ষা মিশনে সদস্য পাঠাবে তারা শুধুমাত্র শান্তিরক্ষা মিশনের নির্ধারিত দায়িত্ব পালন ছাড়া  জাতিসংঘের লোগো সম্বলিত গাড়ি ব্যবহার না করে।"

এদিকে, ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে জাতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যেভাবে নিরীহ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে, তাদের গুলি করে হত্যা করছে এবং পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জোর করে বিবৃতি দিতে বাধ্য করছে- এ বিষয়গুলো জাতিসংঘ মহাসচিব কীভাবে দেখছেন?"

জবাবে ডোজারিক বলেন, "আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যেভাবে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব প্রমাণিত খবর জানা গেছে তা নিয়ে মহাসচিব বিচলিত। এসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।"

এই একই ব্যক্তিরা  (বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী) যখন জাতিসংঘের পতাকা বহন করে অন্য দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার মিশনে যাবে তখনো কী মহাসচিব বিষয়টি নিয়ে স্বস্তি বোধ করবেন, আনসারীর এরকম প্রশ্নের জবাবে ডোজারিক বলেন, "ভালো কথা বলেছেন। একটা বিষয়ে আমরা খুব স্পষ্ট। আর সেটা হলো, বাংলাদেশ সরকার এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের মনে করিয়ে দিতে চাই তারা যেনো মানবাধিকার রক্ষায় শ্রদ্ধাশীল হয়।"

"জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান বলেছেন, সহিসংতার ঘটনা তদন্তে সহযোগিতা করতে তার অফিস প্রস্তুত, মানবাধিকার সংস্থা, বিশ্বের বিশিষ্টজন এবং নোবেলজয়ীরা যখন বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চাইছেন, তখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মহাসচিবের আর কতো প্রমাণের প্রয়োজন," মুশফিকুল ফজল আনসারীর এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ডোজারিক বলেন, "ম্যান্ডেট অনুসারে পদক্ষেপ নিতে মহাসচিব সর্বদা প্রস্তুত রয়েছেন।"