ইতিহাসের সর্বোচ্চ মামলা, দিনের পর দিন আটক, উদ্বিগ্ন স্বজনরা

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় খোদ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে দুই শতাধিক। এছাড়া সারাদেশের জেলা, থানা, পৌর, উপজেলা, ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত মামলা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন মামলার রেকর্ড নেই। 

এসব মামলায় যাকে খুশি তাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এভাবে ধর পাকড় অব্যাহত থাকলে সারাদেশের জেল খানাগুলোতে মানুষের জায়গা হবে না।

এছাড়া ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অফিসে অসংখ্য মানুষকে গ্রেপ্তার করে রাখা হয়েছে। তাদেরকে দিনের পর দিন আটকে রাখা হচ্ছে। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটককৃত ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। 

বিএনপিপন্থি পেশাজীবী সংগঠন ‘মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (এম-ট্যাব)-এর সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দবির উদ্দিন তুষারকে গত ২৪ জুলাই মিরপুর ১৩ নম্বরে রাকিন সিটির বাসার নিচতলা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এখনো তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তার স্ত্রী থানা, পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু নিজের স্বামীর হদিস পাচ্ছেন না। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন এই নারী।

আজ বুধবার তিনি রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে গিয়েছিলেন স্বামীর সন্ধানে। কিন্তু সেখান থেকে কোনো সন্ধান পাননি।  
এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিনার হোসেনকে গত ২৮ জুলাই তার মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকেও আদালতে হাজির করা হয়নি। 

আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আটকের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতের সামনে হাজির করার আইন থাকলেও ডিবি হেফাজতে ৪-৫ দিন রেখে বেআইনি কাজ করছে গণবিরোধী সরকার। আবার আটক না করেই নিরাপত্তার নামে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি অফিসে তুলে এনে তাদেরকে জিম্মি করে রাখেছে। আইনি ভিত্তি ছাড়াই হেফাজতের কাহিনী নজিরবিহীন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বলপূর্বক বন্ধ করতেই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বেআইনি কাজ করছেন, দিবালোকের মতো তা স্পষ্ট। সান্ধ্যকালীন কারফিউ চলাকালীন এলাকা ভাগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘ব্লক রেইড’ পরিচালনা করছে ও নির্বিচারে ছাত্র গ্রেপ্তার করে অভিভাবক, তরুণ সমাজ এবং জনমনে ভীতি ও ত্রাসের সঞ্চার করছে।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে মৃত্যু, গুলিবর্ষণ, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে গঠন করা হয়েছে ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’। এই কমিশনের উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান।

আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে ইউল্যাবের ফটকের সামনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেছেন, ‘যারা নিজেরাই রাজাকার, তারা অপরকে বলে রাজাকার। পৃথিবীতে এর চেয়ে পরিহাসের আর কী আছে। যারা খুনি তারা আমাদের বলে খুনি। যারা বিশ্বাসঘাতক, তারা আজ আমাদের বলে বিশ্বাসঘাতক। ক্ষমতার কেন্দ্রের চারদিকে তো রাজাকাররা বসে আছে। যে ছাত্র ২০০০ সনের পরে জন্ম গ্রহণ করেছে, তাদেরকেও তারা রাজাকার বলে।’