বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান ১৬১ সাবেক কর্মকর্তার

অবিলম্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সকল আন্দোলনকারীদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান করাসহ আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ১৬১ কর্মকর্তা। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে তারা বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধানে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রকার কোটা সংরক্ষণের সুযোগ সংবিধানে রাখা হয়নি। শুধুমাত্র অনগ্রসর নাগরিকের জন্য বিধান তৈরি করার ক্ষমতা রাষ্ট্রকে দেওয়া হয়েছে। সংশোধনের পূর্বে প্রচলিত কোটা পদ্ধতি সংবিধান পরিপন্থি। উক্ত কোটা পদ্ধতির কারণে মেধাবী শিক্ষিত নাগরিকরা অযৌক্তিকভাবে চাকরিপ্রাপ্তিতে চরমভাবে বঞ্চিত হয়। এমন প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সঙ্গত কারণেই কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয় বরং তাদের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে; যা সরকার কতৃর্ক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যেত। কিন্তু সরকার সে পথে না গিয়ে অস্ত্রের ভাষায় একটি ন্যায়সঙ্গত দাবিকে স্তব্ধ করে দেওয়ার পথ বেছে নেয়।’

বিবৃতিতে তারা বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, গত ১৫ জুলাই থেকে সরকারদলীয় বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যৌথভাবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে হামলা-গুলি চালায়, তাদের হামলা হতে নারী শিক্ষার্থীরাও রেহাই পায়নি। গত ১৬ জুলাই হতে শুরু করে আজ পর্যন্ত ২৭৪ জন ছাত্র জনতাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে মর্মে মিডিয়া সূত্রে জানা যায়। এছাড়াও এ সহিংস ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিক নিহত হন। হাজার হাজার ছাত্রজনতা আহত হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেও সরকারদলীয় বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কর্মী হাসপাতালে প্রবেশ করে নির্বিচারে হামলা ও মারধর করে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্বিকার ভূমিকা পালন করে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, দেশব্যাপী কারফিউ জারি ও ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে গভীর রাতে ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১২ হাজার নিরীহ ছাত্রজনতাকে গ্রেফতার করে বিনা বিচারে আটক করে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে, যা এখনো অব্যাহত আছে। সরকারদলীয় বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন হামলা, নির্যাতন ও হত্যা, নারীর প্রতি সহিংস আচরণ মানবতা বিরোধী অপরাধ যা প্রচলিত আইন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’

তারা বলেন, মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল দাবির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন এবং সরকারদলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অমানবিক নির্যাতন-হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা এসব ন্যাক্কারজনক হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের উপযুক্ত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।’