ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ, সরকারের প্রতি অনাস্থা

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশে হত্যা, নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন সাংবাদিকরা। 

আজ শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে কয়েকশ’ সাংবাদিক অংশ নেন।

সমাবেশে বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে এ সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে বলেন, গণহত্যা চালিয়ে এ সরকার গণদুশমনে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না, যত দ্রুত এ সরকার বিদায় নেবে ততই জাতি এবং তাদের মঙ্গল হবে।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, এ সরকারের হাত সাংবাদিকদের রক্ত। আমাদের চারজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, ২০০ জন আহত হয়েছে, ৫০ জন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এ সরকারের হাত ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত। শত শত ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। হাজারো গুলিবিদ্ধ ছাত্র মৃত্যু যন্ত্রণায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। কেউ চোখ হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে। পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকে। ছাত্র খুন করে আপনি (শেখ হাসিনা) গদিতে আরামে থাকবেন এ খায়েশ দেশের মানুষ পূরণ হতে দেবে না। আপনার গদিতে থাকা হবে না। আপনার পতনের মধ্যে দিয়ে ছাত্র হত্যার ফয়সালা করব।’

বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, জনগণ এ সরকারের প্রতি গণ অনাস্থা দিয়েছে। আজ প্রতিটি ঘরে ঘরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে।

তিনি বলেন,পুলিশ গুলি করতে চায় না। যে পুলিশ কৃষকের ছেলে, যে পুলিশ এ মাটিতে খেয়ে বড় হয়েছে, সে পুলিশ গুলি করতে চায় না। হাসিনার নির্দেশে গুলি করতে হয়েছে।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, গুলি করে ছাত্রদের বুক ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়েছে। কোন কোন ছাত্রের বুকে ত্রিশ-চল্লিশটা গুলি করা হয়েছে। ছাত্রদের ওপর আপনার ক্ষোভ কেন? সাংবাদিকদের ওপর আপনার এত ক্ষোভ কেন?

ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেহেদী একজন প্রতিভাবান সাংবাদিক। কেন তাকে হত্যা করলেন। সে তো কোন পক্ষের ছিল না।

তিনি বলেন, সন্তানহারা মায়ের কান্নায় আল্লাহর আরশ কাঁপছে। আপনার (শখ হাসিনা) বুক কাঁপছে না। আপনার কি একটুও ভয় জাগে না? ছাত্রদের রক্ত দেখে আমাদের হৃদয় খান খান হয়ে হয়ে গেছে। প্লিজ এবার পদত্যাগ করে জাতিকে মুক্তি দিন।

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতন গতকালকেই হয়ে গেছে। এ সরকারে যদি ন্যূনতম দেশপ্রেম বা মানবতাবোধ থাকতো তা হলে ছাত্র হত্যার পর পরই পদত্যাগ করতো। জনগণ গর্জে উঠেছে, আপনাকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে।’

কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, এ সরকারের লোকেরা যাতে পালাতে না পারে জনগণকে পাহারা দিতে হবে। আমার ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করে পালাতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশের সকল রেলপথ, রাজপথ, সড়ক পথ, বিমান পথ, নৌপথ বন্ধ করে দিতে হবে। এই হত্যার খুনের বিচার করতে হবে। নাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমরা অপরাধী হয়ে থাকব। দেশের কাছে আমরা অপরাধী হয়ে থাকব। এই জাতির কাছে, মানবতার কাছে অপরাধী হয়ে থাকব। সেটা আমরা হতে চাই না।

রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএফিউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, কবি আবদুল হাই শিকদার, ডিইউজে সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, দ্য নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও ইলিয়াস খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী ও রফিকুল ইসলাম আজাদ, বিএফইউজের সহসভাপতি ও ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি একেএম মহসিন, সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, সরদার ফরিদ আহমেদ, শাহনাজ পলি, এরফানুল হক নাহিদ, এম এ নোমান, তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন শাহীন হাসনাত, রাশেদুল হক ও দিদারুল আলম।

সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল বের করেন সাংবাদিকরা। মিছিলটি হাইকোর্ট, তোপখানা রোড, পুরান পল্টন হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসে শেষ হয়। এ সময় ‘দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ স্লোগানে সাংবাদিকরা মুখর করে তোলেন রাজপথ।