জাতীয় সরকার নিয়ে আলোচনা

চলমান সংকট নিরসনে যে কোনো সময় বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। জরুরি অবস্থা জারির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে একমতও হয়েছেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। জরুরি অবস্থা জারি ছাড়া দেশের চলমান পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে বিষয়টি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সরকারকে জানানো হয়েছে। সে লক্ষ্যে মুখে যাই বলুক তলে তলে এ অবস্থার সমাধানের রাস্তা খুঁজছে সরকার। তবে পদত্যাগ করে জাতীয় সরকার গঠন করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলেও তারা মনে করছেন। তাই জরুরি অবস্থা কোন পদ্ধতিতে জারি করা হবে সেই কৌশল নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা -সমালোচনা চলছে বলে গণভবন সূত্রে জানা গেছে। জরুরি অবস্থা জারি করে নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা যায় কি-না তা নিয়েও আলোচনা করা হচ্ছে।

সংকট মোকাবিলার নানা পথ নিয়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে। মাঠে বল প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাবনা তাদের মাথায় রয়েছে। বেসামরিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। তবে ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করার মধ্যেই সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসা রোধ করা হয়। ফলে আইনগতভাবে সেনাবাহিনী বাংলাদেশের ক্ষমতা নিতে পারবে না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরাসরি সেনাবাহিনীর ক্ষমতা নিতে হলে সংসদ বসিয়ে পঞ্চম সংশোধনী আইন বহাল করতে হবে।

তবে গণভবন সূত্র জানিয়েছে, এক্ষেত্রে একমাত্র সুযোগ প্রথমে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা। এরপর সময়-সুযোগ বুঝে নিজেদের মতো করে জাতীয় সরকার গঠন করবে। তবে এভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যানে কি-না তা নিয়ে সরকারের ভেতরেই সন্দেহ পোষণ করেছেন অনেকে। এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। তবে একটি অংশ মনে করছে দ্রুত এই সরকার ক্ষমতা ছেড়ে জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কারণ আন্দোলনকারীরা আপোষ করবে না। সবার একই দাবি সরকারকে সরে যেতে হবে। এছাড়া দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

সূত্র জানিয়েছে, যদি আওয়ামী লীগকে পদত্যাগ করতেই হয় তবে জাতীয় সরকার নির্বাচন করতে এগিয়ে আসতে পারে ভারত। ভারত চাইছে পছন্দের একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধানকে জাতীয় সরকারের প্রধান করতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেউদ্দিন আহমেদের নামও এসেছে। এদিকে, ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় সরকার গঠন নিয়ে নানা জায়গায় আলাপ হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তিনজন করে ৬ জন এবং জাতীয় পার্টির ২ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, বিচারপতি ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ ৭ জন।

রবিবার বেলা ১১টায় তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বৈঠক হওয়া কথা রয়েছে। এছাড়া বিকেলে গণভবনে জাতীয় নিরাপত্তা সভা ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব বৈঠকে জরুরি অবস্থা এবং জাতীয় সরকার নিয়ে সিদ্বান্ত হতে পারে।