ক্ষমতা কীভাবে হস্তান্তর হবে, বিবেচনার জন্য একটি ফর্মূলা

চলমান বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন থেকে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি জানানো হয়েছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হামলার পরও অনঢ় ছাত্র-জনতা। রবিবার একদিনেই শতাধিক মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সরকারের পতনের দাবিতে সোমবার ঢাকায় লং মার্চ।

এমন পরিস্থিতিতে রবিবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে সংকট সমাধানের ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি রূপরেখা তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো আলী রীয়াজ। 

দ্য মিরর এশিয়ার পাঠকদের জন্য অধ্যাপক আলী রীয়াজের ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উত্থিত শক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ সংবিধানের ভেতরেই আছে। এর বাইরে যে ব্যবস্থা সেটা হচ্ছে অসাংবিধানিক ব্যবস্থা গ্রহণ- হয় তা হবে ক্ষমতাসীনদের উদ্যোগে, অন্যথায় রাজপথের শক্তিতে।

সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যে দরকার–

শেখ হাসিনার পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, একজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া, প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আরেকজন মন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে দুই সদস্যের মন্ত্রীসভা গঠন এবং তার পরে প্রধানমন্ত্রীর রুলস অব বিজনেসের ক্ষমতাবলে সাত বা তার বেশি বেজোড় সংখ্যক উপদেষ্টা নিয়োগ। এই ব্যক্তিদের নির্ধারণ করবে আন্দোলনকারীরা, রাষ্ট্রপতি কেবলমাত্র নিয়োগ দেবেন, এই ব্যক্তিদের নির্ধারণে তার কোনো রকমের ভূমিকা থাকবে না। এই নয়জন ব্যক্তি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার হিসেবে কাজ করবে। (তারা কী করবেন সেটা এখানে আলোচনা করা হচ্ছে না)।

সাংবিধানিক বিভিন্ন পদক্ষেপ যেভাবে অগ্রসর হবে

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন রাষ্ট্রপতির কাছে [৫৭(১)(ক)]। সেই সঙ্গে তিনি সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানাবেন [৭২ (১)] এবং রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেবেন [৭২ (১)]। রাষ্ট্রপতি একজনকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন [৫৬ (১); ৫৬ (২)] যাতে একটি মন্ত্রীসভা গঠিত হয় সেই জন্য প্রধানমন্ত্রী একজনকে মন্ত্রী নিয়োগ করবেন [৫৫ (১)]। তাদের নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি [৫৬ (২)]। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের জন্য সংসদ সদস্য হওয়ার প্রয়োজন নেই, কেননা তিনি সংসদ সদস্যদের ‘অধিকাংশের আস্থাভাজন’ বলে রাষ্ট্রপতির কাছে ‘প্রতীয়মান’ হওয়াই যথেষ্ট [৫৬ (৩)]।

সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলো নিচে দেয়া হলো-

৫৭। (১) প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে, যদি-

(ক) তিনি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন

৭২। (১) সরকারি বিজ্ঞপ্তি দ্বারা রাষ্ট্রপতি সংসদ আহ্বান , স্থগিত ও ভঙ্গ করিবেন...

[তবে আরও শর্ত থাকে যে, এই দফার অধীন তাহার দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক লিখিতভাবে প্রদত্ত পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন।]

৫৫। (১) প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি মন্ত্রিসভা থাকিবে এবং প্রধানমন্ত্রী ও সময়ে সময়ে তিনি যেরূপ স্থির করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী লইয়া এই মন্ত্রিসভা গঠিত হইবে।

৫৬। (১) একজন প্রধানমন্ত্রী থাকিবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রী থাকিবেন।

 (২) প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদিগকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দান করিবেন:

 (৩) যে সংসদ-সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হইবেন, রাষ্ট্রপতি তাহাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন।