রাজারবাগে হট্টগোল, আইজিপিকে ভুয়া বললেন পুলিশ সদস্যরা

সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঢাকার ২৯ থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিটি থানায় পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় থাকছেন সেনা সদস্যরা। শুক্রবার তেজগাঁও থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সেনাবাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তারা। তবে কর্মবিরতি দেওয়া পুলিশ সদস্যদের অধিকাংশই কাজে ফেরেননি। কাজে ফেরানোর জন্য রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল।

তবে তিনি উপস্থিত না থাকায় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম, র‌্যাব মহাপরিচালক একে এম শহিদুর রহমান ও ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। এই মতবিনিময় সভায় আইজিপি আন্দোলনরত পুলিশের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কথা বলেন। তাদের দাবি-দাওয়া বিষয়ে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধি নিয়ে আগামীকাল (রোববার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সভার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাদের বিভিন্ন ক্ষোভ ও হতাশার কথা ব্যক্ত করেন। সভায় একজন কনস্টেবল বলেন, গত ৫ আগস্ট কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার যত পুলিশ সদস্য মারা গেছে গত ৫০ বছরেও পুলিশের অফিসার পদমর্যাদার এতো সদস্য মারা যায়নি। 

তারা দাবি করেন, পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নে আইজিপি যে ৮ সদস্যের কমিটি করেছেন সেই কমিটির পাশাপাশি কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যের আরেকটি কমিটি তারা করবেন। তাদের সমস্যা ও সমাধান বাস্তবায়নে এই কমিটি কাজ করবে। এ সময় আইজিপিকে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগানও দেন পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশের সার্বিক পরিস্থিতিতে নিয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম।

বক্তব্যে আইজিপি বলেন, আমরা আহত পুলিশ সদস্যদের আধুনিক চিকিৎসার ব্যাবস্থা করব। তাদের জন্য প্রয়োজনে বিদেশ থেকে পরামর্শক আনা হবে। এছাড়া নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের ক্ষতিপূরণের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হবে। আপনারা (পুলিশ সদস্যরা) যে ১১ দফা দিয়েছেন সেগুলো নিয়ে আমরা রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বসব আপনাদের প্রতিনিধিদল নিয়ে। এছাড়া কোনো জুনিয়র পুলিশ সদস্য সিনিয়র পুলিশ সদস্যের কাছে হয়রানি হবে না থানা পর্যায়ে।

বিকেল চারটায় এই মতবিনিময় শুরুর আগে আইজিপি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে গিয়েছিলেন আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে। বক্তব্যে সেটাও উল্লেখ করেন। এই সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পুলিশ বাহিনীর সংস্কার চেয়ে স্লোগান দেন। দাবি তোলেন উচ্চাভিলাষী পুলিশ সদস্য হারুনসহ অন্যদের শাস্তির।

তবে দাবি-দাওয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সভার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা। তারা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে রাজারবাগে আনতে হবে। আলোচনা হবে এখানেই।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের বৈষম্য বিরোধী কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক কনস্টেবল শোয়াইবুর রহমান জানান, আমরা রোববারের মিটিংয়ের বিষয়ে এখন পর্যন্ত (রাত ৮টা ৪২) কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা না পাওয়া পর্যন্ত কাজে ফিরব না। প্রয়োজনে পুলিশের নাম, পোশাক সব সংস্কার করতে হবে।

তিনি বলেন, আইজিপিকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আমরা পূর্ববর্তী সময়ে ভুল করেছি। এছাড়া পুরো পুলিশ বাহিনী সংস্কার করে নতুন বাহিনী করতে হবে। এই বাহিনীর ঘোষণা দেবে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।