সীমান্ত হত্যা বন্ধ, তিস্তা চুক্তি ও ভারত থেকে পণ্য সরবরাহ চায় বাংলাদেশ

সীমান্ত হত্যা বন্ধ, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ ভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

বুধবার (১৪ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এসব বিষয়ে আলোচনা করেন।

উপদেষ্টা বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়। আগামী দিনগুলোতে আরও ‘জনগণের সম্পৃক্ততার’ ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রে উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য তিনি ভারত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের ঘটনাবলী সম্পর্কে একটি অত্যন্ত অতিরঞ্জিত মিডিয়া প্রচারণার কথাও উল্লেখ করেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত থেকে আসা এ ধরনের বক্তব্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সহায়ক নয়। ভারতীয় হাইকমিশনার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টাকে তার নতুন দায়িত্বের জন্য অভিনন্দন জানান।

তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছার কথা উল্লেখ করেন এবং উভয় দেশের জনগণের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা পূরণে আগামী দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য ভারত সরকারের দৃঢ় ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

সংখ্যালঘুসহ বাংলাদেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যাক্ত করেন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সরকার সকল ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনও সহিংসতা বা ভীতি প্রদর্শন সহ্য করা হবে না।

তিনি আরও বলেন, সমস্ত ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলেও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।

সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে হাইকমিশনারকে অবহিত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, গত সপ্তাহে সাহসী ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্বাধীনতা অজর্ন করেছে। বৈষম্য ও অন্যায় দূর করার লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত শক্তি স্বৈরাচার ও নিপীড়ক শক্তির বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক নিয়োগ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাহসী ছাত্র আন্দোলন অচিরেই একটি নিয়মভিত্তিক, ন্যায়পরায়ণ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সারা দেশে বিপ্লবী সংগ্রামে রূপ নেয়। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শিক্ষার্থী ও জনগণের অনুরোধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিতে সম্মত হন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে সবচেয়ে জরুরি কাজ হচ্ছে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। জনগণের, বিশেষ করে যুবসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকার অর্থবহ সংস্কার ও দীর্ঘস্থায়ী রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে।