রাজনৈতিক ব্যক্তি-পুলিশসহ সেনানিবাসে আশ্রয় নেন ৬২৬ জন

রাজনৈতিক ব্যক্তি-পুলিশসহ সেনানিবাসে আশ্রয় নেয় ৬২৬ জন

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ মোট ৬২৬ জন প্রাণ বাঁচাতে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিল বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

রোববার (১৮ আগস্ট) সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আইএসপিআর।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর জানিয়েছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে প্রাণ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, বিচারক ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬২৬ জন বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের মধ্যে ৬১৫ জন স্ব-উদ্যোগে সেনানিবাস ছেড়ে যান। এখনো সাতজন সেনানিবাসে আছেন। এছাড়া চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সারাদেশে মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়েন। বিক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বাড়িতে ব্যাপক হামলা-অগ্নিসংযোগ করে। অবস্থা বেগতিক দেখে আত্মগোপনে চলে যান ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, দলীয় এমপি ও নেতারা। পুলিশের ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা ও অনেক বিচারকও আত্মগোপন করেন।

এমন অবস্থার মধ্যেও কেউ কেউ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে ৭ আগস্ট বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়। পরে তাদের নিয়ে যায় শৃঙ্খলা বাহিনী।

গত বুধবার রাতে এ দুজনকে ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতারের কথা জানায় পুলিশ।

এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককেও সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতারের কথা জানানো হয়। রিমান্ডে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে খিলক্ষেত থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এখনো অধিকাংশ নেতাই আত্মগোপনে আছেন। এমন অবস্থার মধ্যে আজ আইএসপিআরের পক্ষ থেকে ৬২৬ জনের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়ার কথা জানানো হলো।

আইএসপিআর জানায়, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। এসময় প্রাণনাশের আশঙ্কায় কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিবিধ নাগরিকরা সেনানিবাসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এর প্রেক্ষিতে বিচার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড রোধ, জীবন রক্ষা ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে জীবন বিপন্ন ২৪ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ৫ বিচারক, ১৯ অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ২৮ পুলিশ অফিসার, ৪৮৭ জন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিবিধ ১২ জন ও ৫১ জন পরিবার পরিজনসহ (স্ত্রী ও শিশু) সর্বমোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়।

পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে ৬১৫ জন স্ব-উদ্যোগে সেনানিবাস ত্যাগ করে। আশ্রয় দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্য থেকে এ পর্যন্ত চারজনকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ/মামলার ভিত্তিতে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়প্রাপ্ত তিনজন তাদের পরিবারের ৪ সদস্যসহ মোট সাতজন সেনানিবাসে অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সব তথ্যাদি দেওয়া হয়েছে।

আইএসপিআর আরও জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের পাশাপাশি বিচার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড রোধ ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে নিরপেক্ষ ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এক্ষেত্রে, গুজবে কান না দিয়ে সবাইকে ধৈর্যশীল ও সহযোগী মনোভাব প্রদর্শন করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা জনসাধারণের পাশে আছে এবং থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।