ধানমন্ডির রাস্তায় পড়ে ছিল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিলাসবহুল গাড়ি!

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোটি টাকার গাড়ি পড়ে ছিল ধানমন্ডির রাস্তায়

রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডির রাস্তায় মালিকবিহীন অবস্থায় পড়ে ছিল আনুমানিক দুই কোটি টাকা মূল্যের একটি বিলাসবহুল ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি। রোববার দিনভর ধানমন্ডির বাইতুল আমান মসজিদের সামনের রাস্তায় থাকা গাড়িটির মালিকের পরিচয় পাওয়া গেছে মধ্যরাতে। ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িটির মালিক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

জানা গেছে, রোববার সকাল থেকে ঢাকা মেট্রো-ঘ ২১-৮৪৫৬ গাড়িটি রাস্তায় পড়ে ছিল। দিনভর মালিকের খোঁজ না পাওয়ায় এবং দীর্ঘসময় একইস্থানে থাকায় কে বা কারা ওয়ারিশহীন গাড়িটির লুকিং গ্লাস খুলে নিয়ে যায়। অবশেষে মধ্যরাতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গাড়িটি অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরই জানা যায় গাড়িটির মালিক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

মূলত গাড়িটির সন্ধান পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। ট্রাফিক অ্যালার্ট গ্রুপে একজন গাড়িটি নিয়ে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ধানমন্ডির বাইতুল আমান মসজিদের সামনের দিকের রাস্তায় কেউ একজন ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি ফেলে গেছেন। রোববার সকাল থেকে গাড়িটি এখানে পড়ে আছে, গাড়িটি আনলক অবস্থায় আছে। কেউ কি এর মালিককে চিনেন?

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে গাড়িটি পড়ে ছিল। সারাদিন একইস্থানে গাড়িটি দেখে অনেকের সন্দেহ হয়। এরপর সামনে গিয়ে গাড়িটি আনলক অবস্থায় দেখা গেছে। তারা খুলে দেখেন কেউ নেই গাড়ির ভেতরে। জানাজানি হলেও গাড়ির মালিকের পরিচয় জানাতে পারেনি কেউই। অনেক খোঁজখবর করে এবং কিছু তথ্য ও ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে গাড়িটি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের।

মিরপুর বিআরটিএ-তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাড়িটি কেনা হয়েছিল ২০২২ সালের ৩১ জুলাই। কিন্তু রেকর্ড আপডেট করা হয়েছে একই মাসের ২৮ জুলাই। ট্যাক্স টোকেন ইস্যু করা হয়েছে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট। গত ৩০ জুলাই যার মেয়াদ শেষ হয়েছে। ট্রাস্টি সার্টিফিকেট ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট। সেটিরও মেয়াদ গত ৩ আগস্ট শেষ হয়েছে। গাড়িটি ম্যানুফেকচার করার সময় ২০২২। ফিটনেস ইস্যু করা হয়েছে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই, যার মেয়াদ রয়েছে ২০২৭ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত।

গাড়ির মালিকানাধীনের জায়গায় প্রাইভেট উল্লেখ করা হয়েছে। মালিকের নামের স্থানে আসাদুজ্জামান খান এবং তার বাবা মৃত আশরাফ আলী খান দেওয়া হয়েছে। আর গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হয়েছে মিরপুর বিআরটিএ-তে। এছাড়া গাড়িটি কেনার জন্য করের টিন নম্বরের জায়গায় (৫১১১১১২৫৫০৫৬) দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ গাড়িটি কেনার জন্য মালিকের যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে সেটি ডায়াল করলে ট্রু কলারে আসাদুজ্জামান খানের নাম শো করে।

এছাড়া গাড়িটি যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তা আরো একটি ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গাড়িটি কেনার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার সঙ্গে কয়েকজন ছবি তুলছেন। ছবিতে মন্ত্রী ছাড়াও ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের সাবেক ডিসি এইচ এম আজিমুল হক এবং মন্ত্রীর কয়েকজন কাছের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তারা গাড়িটি কেনার পর শোরুমে একটি যৌথ ছবিও তোলেন। পাশে গাড়িটি রাখা ছিল। সেটির সামনে লাগানো উদ্ধারকৃত গাড়ির নম্বর প্লেটের সঙ্গে মিল রয়েছে।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আসাদুজ্জামান খান কামালের এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, তারা গাড়িটি ফেসবুকে দেখেছেন। গাড়ির নম্বর প্লেট দেখে চিনতে পেরেছেন এটিই আসাদুজ্জামান কামালের গাড়ি।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর মন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে যান। গা ঢাকা দেন আসাদুজ্জামান খান কামালও। এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। সাবেক এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গাড়িটি নিজ বাড়িতে না রেখে অন্য কোনো গ্যারেজে রেখেছিলেন। পরে কোনো কারণে গাড়িটি ধানমন্ডির রাস্তায় রেখে ড্রাইভার পালিয়ে গেছেন বলে স্থানীয়দের ধারনা।