হঠাৎ ভয়ংকর বন্যা, বিপর্যস্ত ৯ জেলা

চারিদিকে থৈ থৈ পানি, দুর্ভোগের অন্ত নেই বানভাসী মানুষের

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে বন্যায় কবলে পড়েছে দেশ। এই দফার বন্যায় ইতোমধ্যে ডুবেছে আটটি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। যে কোথাও তাকালে চোখে পড়বে শুধু পানি আর পানি। ভয়াবহ এই বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সময় যতই বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যাও ততই বাড়ছে। এর ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বানভাসী মানুষদের।

বন্যার পানিতে জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। গো-খাদ্যের অভাবে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দেশের পূর্ব সীমান্তের কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এই তিন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। পানির তোড়ে ভেসে গেছে বহু বাঁধ, রাস্তাঘাট ও সেতু। রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। অনেকে পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। তবে বন্যার্ত অনেকে বলছেন, তাদের এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় পরিবার নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।

লক্ষ্মীপুরে কয়েকটি পৌর শহরসহ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সিলেট অঞ্চলেও আবার পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।

বন্যায় ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পানির তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। মুহুরি নদীর পানি বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল তলিয়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চাল ছুঁয়েছে বন্যার পানি।

কুমিল্লায় বন্যার পানিতে একের পর এক গ্রাম ডুবছে। চৌদ্দগ্রামে হাসপাতালের ভেতরে পানি ঢুকেছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বন্যার অবনতি হয়েছে। প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় কেউই নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারছে না।

জানা গেছে, উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের ৪২৯টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে হাসপাতাল আঙিনায় বুকসমান পানি থাকায় অনেকেই আটকা পড়েছেন হাসপাতাল ভবনে।

আখাউড়ার পরিস্থিতিও ভয়াবহ: ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর ও আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট প্লাবিত হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টার পর ইমিগ্রেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। পানির তোড়ে গাজীর বাজার এলাকায় একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের সবজিখেত, ফসলি জমি, পুকুরসহ এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর।

লক্ষ্মীপুরে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী: টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে চারটি পৌর শহরসহ লক্ষ্মীপুরের নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দী প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বাসিন্দা। অনেকের বাড়িতে রান্না বন্ধ রয়েছে। বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। এখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

মৌলভীবাজারে কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই ও মনু নদীর বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার বেশ কিছু রাস্তার ওপর দিয়ে পানি উপচে পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত রয়েছে। জেলার ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

পানি বেড়েছে বরিশালের ৭টি নদ-নদীর। এতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। পানি উঠেছে নগরের বর্ধিত অনেক এলাকায়ও।

হবিগঞ্জের খোয়াই নদের পানিও হু হু করে বাড়ছে। সব পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহররক্ষা বাঁধ ছুঁই ছুঁই করছে পানি। এ ছাড়া চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে।