সচিবালয় এলাকার পরিস্থিতি জাগ্রত ছাত্রসমাজ মোকাবিলা করেছে: আসিফ নজরুল

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, জাগ্রত ছাত্রসমাজ যারা স্বৈরাচরের পতন ঘটিয়েছে, তাদের অপরিসীম ত্যাগের ভূমিকা সচিবালয় এলাকার পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।

আজ সোমবার হামলায় আহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। সেখানে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি। 

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন তারা।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, আনসার সদস্যের দাবি ছিল- এখনই রাত ১০টার সময় প্রজ্ঞাপন জারি করে তাদের জাতীয়করণ করতে হবে। তারা এমন এক অসম্ভব দাবি তুলেছিল গণ্ডগোল করার জন্য। সচিবালয়ে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারতো। জাগ্রত ছাত্রসমাজ যারা স্বৈরাচরের পতন ঘটিয়েছে, তাদের অপরিসীম ত্যাগের ভূমিকা পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, যেই ছাত্ররা স্বৈরাচরের পতন ঘটিয়েছে, যারা আমাদের স্বপ্ন এবং যাদের ভবিষ্যতের প্রতিভূ হিসেবে দেখি তাদেরকে রাস্তায় ফেলে কীভাবে নির্মমভাবে মেরেছে। আপনারা তাদের (আনসার সদস্য) যুদ্ধাংদেহী মনোভাব দেখেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের ছাত্রদের ওপর, সমন্বয়কদের ওপর, বিশেষ করে হাসনাতের ওপর যে বর্বর হামলা হয়েছে তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ নিতে এসেছি। সাধারণ মানুষকেও গুরুতরভাবে আহত করা হয়েছে। দুইজনকে অপারেশন করার প্রয়োজন হচ্ছে। হাসনাতের অবস্থা এখন মোটামুটি ভালো আছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা মনে করি, কাল আনসার বাহিনীর ছদ্মবেশে যারা এসেছিল কোনো দাবি আদায় তাদের এজেন্ডা ছিল না। দাবি আদায় হয় আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে। তারা বারবার আলাপ-আলোচনা করে সম্মত হয়ে ফিরে গেছে এবং বারবার আমাদের ঘিরে ফেলেছে। লাঠি তাদের স্টকে ছিল- আপনারা দেখছেন তারা মারমুখীভাবে ছাত্রদের ওপর নির্যাতন করেছেন।

গত দুইদিন ধরে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন আনসার সদস্যরা। দাবি আদায়ের জন্য গতকাল দুপুর ১২টার পর সচিবালয়ের বিভিন্ন ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। তাদের অবস্থানের কারণে সচিবালয়ে কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারছিল না।

সচিবালয়ে আনসারের একদল সদস্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেককে আটকে রেখেছেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। পরে রাত ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। কিছুক্ষণ পর তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকায় যান। এরপর আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে পিছু হটে আনসার সদস্যরা এবং শিক্ষার্থীদের প্রবল প্রতিরোধে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা আন্দোলনে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ও সাধারণ মানুষের লাল বিপ্লবে বাংলা বসন্তের গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে গত ৮ আগস্ট। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন তাদের শপথ পড়ান।

এরপর থেকে বিভিন্ন মহল তাদের নানা দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এলাকায় এবং জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি করার মধ্য দিয়ে নতুন সরকারের শুরুর কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার প্রয়াস চালাতে থাকে। তারা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের দাবির লিখিত আবেদন প্রধান উপদেষ্টা তথা সরকারের কাছে না জানিয়ে বিশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টির আশ্রয় নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আনসারদের একটি দল গত দুদিন যাবত সচিবালয় এলাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। দেশে নজিরবিহীন বন্যা পরিস্থিতি অবস্থায় তাদের এমন কর্মসূচি নানা সন্দেহের সৃষ্টি করে। গতকাল রাতে তাদের আঘাতে অনেক ছাত্র-জনতা আহত হয়। এক পর্যায়ে জাগ্রত ছাত্রদের প্রতিরোধে তারা পিছু হটে এবং পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। 
  
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর পরদিন আজ আনসার বাহিনীর আটক অনেক সদস্যকে আদালতে নেয়া হচ্ছে। মামলা হচ্ছে এবং তাদের ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়েছে। বিকেলে তাদের আদালতে তোলার কথা। এদিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এবং সচিবালয় এলাকার সব ধরনের সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া তার ভাষণে গতকাল বলেছেন, আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার থাকবে পুরোপুরি সুরক্ষিত। আমাদের লক্ষ্য একটিই। উদার, গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।