অবশেষে ফারাক্কা নিয়ে মুখ খুললো ভারত

অবশেষে ফারাক্কা নিয়ে মুখ খুললো ভারত

ত্রিপুরার ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার পর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত ফেনী-কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরসহ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা। এখনো স্বাভাবিক হয়নি এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতি। এরই মধ্যে খবর পাওয়া গেছে ফারাক্কা ব্যারাজের ১০৯টি গেটও খুলে দিয়েছে ভারত। এ নিয়ে সোমবার দিনভর তোলপাড় দুই দেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম।

ডম্বুর বাঁধ খোলা নিয়ে ভারতের ব্যাখ্যা ছিল- তার বাঁধের মুখ খোলেনি, পানির চাপে বাঁধ একা একাই খুলে গেছে। এবার ফারাক্কা ব্যারাজের ১০৯টি গেট খোলা নিয়েও মুখ খুললো ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন।

ফারাক্কা ব্যারেজ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নয়াদিল্লির সরকারি মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, আমরা ফারাক্কা ব্যারেজের সবকটি জলকপাট (স্লুইচগেট) খোলার খবর গণমাধ্যমে দেখেছি যা গঙ্গা/পদ্মা নদীর প্রাকৃতিক গতিপথে ১১ লাখ কিউসেক পানি প্রবাহিত করবে। এই বর্ষা মৌসুমে এটি একটি স্বাভাবিক কার্যক্রম। উজানে (ভারতীয় অংশে) গঙ্গা নদীর অববাহিকায় ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার ঘটনা সামাল দিতে এটি খুলে দেওয়া হয়।

বুঝতে হবে ফারাক্কা হচ্ছে একটি ব্যারেজ, এটি শুধুমাত্র বাঁধ নয়। যখনই পানির স্তর বিপৎসীমার কাছে পৌঁছে যায় তখনই তা ছেড়ে দেয়া হয়। ফারাক্কা খালে ৪০ হাজার কিউসেক পানি সরিয়ে নেয়ার জন্য এটি একটি কাঠামো যা মূল গঙ্গা/পদ্মা নদীর উপর স্থাপিত। যখন অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশের প্রধান নদীতে প্রবাহিত হয়।

প্রোটোকল অনুযায়ী, এ সংক্রান্ত তথ্য নিয়মিত এবং সময়মত বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আদান-প্রদান করা হয়। এবারও তাই করা হয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির জন্য ভুয়া ভিডিও, গুজব এবং ভয়ভীতি দেখাতে দেখেছি আমরা। এটিকে দৃঢ়ভাবে সত্যের মাধ্যমে মোকাবিলা করা উচিত।

এর আগে, সোমবার ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি জলকপাটই (স্লুইচগেট) খুলে দেয় ভারত। একদিনেই এই বাঁধ থেকে (ডাউন স্ট্রিম) ছাড়া হয়েছে ১১ লাখ কিউসেক পানি। কর্তৃপক্ষের দাবি, বিপৎসীমার উপরে থাকা পানি না ছাড়লে বাঁধের মারাত্মক ক্ষতি হতো। এ কারণে বাধ্য হয়েই বাঁধের মুখ খুলে দিতে হয়েছে।

কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া দফতরের দেওয়া পূর্বাভাসকে সত্যি করে দুদিন ধরে এক নাগাড়ে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। তাতে বেড়ে গেছে গঙ্গা নদীর পানি স্তর এবং চাপ বেড়েছে ফারাক্কা ব্যারেজে। এছাড়াও, পশ্চিমবঙ্গে পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ড ও বিহারে বন্যার কারণে ফারাক্কার পানি বিপৎসীমার ওপর উঠে গেছে। এ কারণে বাঁধের ১০৯টি গেটই খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এসব গেট দিয়ে সোমবার ১১ লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে।

ফারাক্কা ব্যারেজের জেনারেল ম্যানেজার আর দেশ পাণ্ডে বলেন, ফারাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ সবসময় এলার্ট রয়েছে। প্রতিমুহূর্তে নজর রাখা হচ্ছে। খুব কম সময়ের মধ্যে যেভাবে পানির চাপ তৈরি হয়েছে তাতে ১০৯ গেটের সবকটি খুলে না দিলে ব্যারাজের ওপর বড় চাপ তৈরি হতো। এর ফলে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারত। আপাতত ফিডার ক্যানেলে ৪০ হাজার কিউসেক ও ডাউন স্ট্রিমে ১১ লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে।