মধ্যরাতে ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ৪০

মধ্যরাতে ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ৪০

মধ্যরাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন। এসময় বেশ কয়েকটি বাস এবং বিএম কলেজের প্রশাসনিক ভবনসহ ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের বাসিন্দা ববি শিক্ষার্থী তাসনুভা চৌধুরী জোয়ার পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে পার্শ্ববর্তী পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সোমবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে বিএম কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী সমন্বয়ক পরিচয়ে বিরোধ নিরসনে জোয়াদের বাসায় গেলে সেখানে কথা কাটাকাটি হয়। জোয়া এসময় ফোনে ববি শিক্ষার্থী তার বন্ধুদের জানালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩০/৪০ জন সেখানে যায়। মা এবং তাকে হেনস্থা অপমান করা হয়েছে বলে জোয়া তাদেরকে জানালে তারা সংখ্যায় কম থাকা বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর ও কয়েকজনকে আহত করে। পরে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে আসে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার রাতে নগরের বিভিন্ন স্থানে ববি শিক্ষার্থীদের খুঁজতে থাকে। রাত ১০টা নাগাদ নগরীর বটতলা এলাকায় ববি’র ২ শিক্ষার্থীকে পেয়ে মারতে থাকে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। তখন প্রাণ বাঁচাতে ওই দু’জন দৌঁড়ে পাশেই থাকা বটতলা পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেয়। সহপাঠীদের মারধর করার খবর পেয়ে রাত ১২টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০/৫০ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাসে করে সেখানে গেলে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই বাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও চালকসহ ১৫/২০ জনকে আহত করে।

সহপাঠীদের মারধর করার খবর পৌঁছলে বাস-ট্রাকবোঝাই হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বরিশাল নগরীর বাংলাবাজার এলাকায় জড়ো হয়। সেখান থেকে আরও প্রায় ২ কিলোমিটার হেঁটে তারা বিএম কলেজে গিয়ে হামলা চালায়। এসময় সঙ্গে করে ট্রাক ভর্তি পাথর, বেশ কয়েকটি থ্রি হুইলার ভর্তি ইটের টুকরা, লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে যায় ববি শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সবার হাতেই ছিল রড পাইপ, লাঠি আর ধারাল অস্ত্র। রাত ১টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক হল এবং শ্রেণি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় তারা। হামলার প্রথম পর্যায়ে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা পাল্টা হামলা চালানোর চেষ্টা করলেও সংখ্যায় অনেক কম হওয়ায় খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। এরপর বিএম কলেজের পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর তাণ্ডব চালায় ববি শিক্ষার্থীরা। ভাঙচুর চালানো হয় আবাসিক হলগুলোর প্রায় সকল কক্ষ। প্রশাসনিক ভবনেও চালানো হয় তাণ্ডব। ভাঙচুর করা হয় কলেজের ৪টি বাস। রাত পৌঁনে ৩টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রায় ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় তারা।

এসময় সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ল্যান্সকর্পোরাল বুলবুল নামে এক সেনা সদস্য আহত হয়েছেন বলে শোনা গেলেও তা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৪০/৪৫ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেল কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। এদের মধ্যে অন্ততঃ ২৩ জনকে বরিশাল শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে। হামলা চালাতে গিয়ে ৫ জন বিএম কলেজের ভেতরে আটকা পড়েছে এবং তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে সেনাবাহিনীকে জানিয়েছে ববি শিক্ষার্থীরা। রাত ৪টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিএম কলেজ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে।