সালমানের গ্লোবাল ভয়েস কল সিন্ডিকেট হাতিয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা

সরকার পরিবর্তন হয়েছে। সালমান এফ রহমান জেলে আছেন। কিন্তু তার নেতৃত্বাধীন আইজিডাব্লিউ অপারেটরস ফোরাম  এখনও সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালিত করছে। তার গ্লোবাল ভয়েস কোম্পানি এখনও ব্যবসা করে যাচ্ছে। এখনও প্রতিদিন বিদেশ থেকে আসা প্রতিটা ফোন কলে  এ ফোরাম হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।

গত ৯ বছরে এ সিন্ডিকেট নিয়ে গেছে প্রায় ৭৫০০ কোটি টাকা। অথচ যে প্রক্রিয়ায় কাজটি করা হচ্ছে, সেটা  দেশের আইন বিরুদ্ধ বিষয়। একটা নীতিমালার আওতায় বিদেশ থেকে ফোন কল আসা যাওয়ার চারটি স্তর তৈরি করা হয়েছিল। এই সিন্ডিকেট  পরীক্ষামূলক  কথা বলে যুক্ত করে আরেকটা লেয়ার। এর ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয় ৪৫০০ কোটি টাকা।

কেউ যখন বিদেশে ফোন করেন, কিংবা বিদেশ থেকে যখন কেউ ফোন করেন, তখন সরাসরি গ্রাহক মোবাইলে কল আসে না। বিদেশ থেকে রিং টোন আসে কয়েকটা ধাপ পেরিয়ে। বিদেশ থেকে কল আসে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে বা আইজিডাব্লিউ অপারেটরের কাছ থেকে। এরপর সেটা যায় ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ বা আইসিএক্স মাধ্যমে।

এই এক্সচেঞ্জ অপারেটর কলটি পাঠিয়ে দেয় নির্ধারিত  মোবাইল অথবা ল্যান্ড ফোন  অপারেটারকে। অবৈধ পথে কল আসা যাওয়া বন্ধ করা  এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ে  ২০০৮ সালে  ইন্টারন্যাশনাল  লং ডিস্টেন টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস  নামে পলিসির আওতায় তিন স্তর  বিশিষ্ট  এই পদ্ধতি চালু করে বিটিআরসি।

২০০৯-১০ অর্থ বছরে প্রতি ইন কামিং কল ছিল ১০০ কোটি মিনিটের বেশি। প্রতি মিনিট কল রেইট ছিল ৩ মার্কিন সেন্ট। অর্থাৎ প্রতি মাসে এই খাতে ২১০ কোটি টাকার বেশি বাজার রয়েছে।

২০১৫ সালে বছরে ৫০০০ কোটি টাকার আন্তর্জাতিক কল ব্যবসায়ে মরিয়া হয়ে উঠে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী কয়েকজন। আগের তিনটির পাশাপাশি আইজিডাব্লিউ অপারেটরের লাইসেন্স দেওয়া হয় নতুন ২৬ টি প্রতিষ্ঠানকে।

এরপরে  দৃশ্যপটে আসেন সালমান এফ রহমান। তার প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ভয়েসের  চাপের কারণে পাল্টে  যায় আন্তর্জাতিক  কল আসার যাওয়া কাঠামো। তিন স্তরের আন্তর্জাতিক পলিসি পাশ কাটিয়ে করা হয় চার স্তর। নতুন গঠন করা দ্বিতীয় স্তরে মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে  সাত সদস্যের আইজিডাব্লিউ অপারেটরকে যুক্ত করা হয়।  জুড়ে দেওয়া হয় এই কলারের মাধ্যমে কল বণ্টনের শর্তও।

পরীক্ষামূলকভাবে তিন থেকে ছয় মাসের কথা বলা হলেও এখন চলছে তাদের সিন্ডিকেট বাণিজ্য। বাংলাদেশ টেলিফোন রেগুলেটারি কমিশন (বিটিআরসি)- এর কমিশনার অধ্যাপক মুশফিক মান্নান চৌধরী দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, এই সেন্ড বক্স পিরিয়ড তিন বা সর্বোচ্চ এক বছর হতে পারে। কিন্তু এখনও এই কার্যক্রম চলছে। এই কার্যক্রম নয় বছর হতে চলল। হঠাৎ করে কেউ না কেউ এই সিস্টেমকে হারভেন্ট করেছে।

এই সিন্ডিকেট পলিসি উপেক্ষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দরও গোপন রেখেছিল। বিসিআরসিকে চাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক  কল রেট কমিয়েছে তারা। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর  থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত  নয় বছরে  প্রকৃত দরের চেয়ে কম  পয়সা দিয়ে ৭ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই  কোরামটি। এর মধ্যে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।  বাকিটা বঞ্চিত হয়েছে দেশের মোবাইল অপারেটর, আইসিএ এবং ১৬ টি আইজিডাব্লিউ প্রতিষ্ঠান।