গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত, আহত ৫০

গোপালগঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানীর গাড়ি বহরে আওয়ামী লীগের হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন। এ সময় কমপক্ষে ১০টি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

আজ শুক্রবার বিকেলে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা ঘোনাপাড়া মোড়ে এ হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম শওকত আলী দিদার (৪০)। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রথম শ্রেণীর আম্পায়ার বলে তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত একটি ভিজিটিং কার্ডের বরাত দিয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান নিশ্চিত করেছেন। 

নিহত শওকত আলী দিদার স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিক উজ্জামান।

এই ঘটনায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী আহত হয়েছেন, তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না, রাজু বিশ্বাস, মাহাবুব খান মুরাদ, লিন্টু মন্সী, গোপালগঞ্জের  সালমান সিকদার, সুজন সিকদার, সবুজ সিকদার, ঢাকার মতিঝিল এলাকার  নাসির আহমেদ মোল্লা, বাদশা মোল্লা, নিশান, হাসান, মাতুয়াইলের আলাউদ্দিনসহ ১৬ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ও ৩ জনকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

আহতরা সবাই বিএনপি ও সেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা ও গোপালগঞ্জের নেতাকর্মী। সংঘর্ষে আহত রোমান মোল্লা ঘোনাপাড়া বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের সমর্থক।

এছাড়া গোপালগঞ্জের সময় টিভির ক্যামেরা পার্সন  এইচ, এম মানিকের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে  তাকে বেধরক মারপিট করা হয়।

এদের মধ্যে গুরুতর আহতবস্থায় এসএম জিলানী ও তার স্ত্রী রওশন আরা রত্না এবং ঢাকার সেচ্ছাসেবক দলের নেতা বাদশার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক।  

গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিক উজ্জামান জানান, শুক্রবার বিকেলে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা বেদগ্রাম মোড়ে বিএনপির একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভা শেষে এসএম জিলানী গাড়ি বহর নিয়ে গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্য রওনা হন। তাদের গাড়ি বহর সদর উপজেলা ঘোনাপাড়া পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২ থেকে ৩শ’ জন নেতাকর্মী মাইকিং করে দেশি অস্ত্র নিয়ে সড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। তারা গাড়ি ভাংচুর করে এবং নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে শওকত আলী দিদার নিহত ও বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিকদার শহিদুল ইসলাম লেলিন জানান, আমরা বেদগ্রামের মোড়ে শান্তিপূর্ণ পথসভা শেষ করে সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর বাবা মায়ের কবর জিয়াতের উদ্দেশ্য টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলাম। ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছালে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিন মোল্লা, গোবরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিকরুল ফরিক, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলিমুজ্জামান ও হাসান মোল্লার নেতৃত্ব গাড়ি বহরে হামলা করা হয়। 

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফারুক আহমেদ জানান, আজ বিকেল সাড়ে ৫ টায় আহত অবস্থায় কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও তার স্ত্রী রওশন আরা রত্নাসহ ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের অধিকাংশের মাথাসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে দেশীয় ধারালো অস্ত্রের কোপ রয়েছে। তাদের সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ৭২ ঘণ্টা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। এদের মধ্যে ৩ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ঘোনাপাড়ার আওয়ামী লীগ নেতা আলীমুজ্জামান বলেন, এসএম জিলানীর গাড়িবহর ঘোনপাড়া অতিক্রম করার সময় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিড়ে পদদলিত করা হচ্ছিল । এ বিষয়টি জানিয়ে মাইকিং করা হলে স্থানীয়রা সংগঠিত হয়ে এটি প্রতিরোধ করে। তখন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়ি বহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিল। কেন এ ঘটনা ঘটেছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে কেউ কেউ বলছে সেখানে ব্যানার টানাটানি নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়ার অদূরে দোলা পাম্পের বিপরিত পাশ থেকে রাত ৮ টার দিকে শওকত আলী দিদার নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহের সুরাতহাল করা হয়েছে। এরপর পোস্টমর্টেম করার জন্য মরদেহটি গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।