বৃষ্টিভেজা স্মরণসভায় শহীদ ও গুম পরিবারের সদস্যদের আর্তনাদ

বৃষ্টিভেজা স্মরণসভায় শহীদ ও গুম পরিবারের সদস্যদের আর্তনাদ

বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করেই বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা ছুটে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সবশেষ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি গুরুতর আহতরাও এসেছিলেন হুইল চেয়ারে করে। তারা সেখানে তুলে ধরেছেন নিজেদের কষ্টের কথা। চেয়েছেন বিচার।

 শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া বিএনপির স্মরণসভায় প্রথম দিকে কথা বলতে দেওয়া হয় জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে। গত ১৫ বছরের গুম-খুন পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য দেন। স্বজন হারানো আর শারীরিক কষ্টের কথা বলতে গিয়ে সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে বিচার চান এসব হত্যায় জড়িতদের।

স্মরণ সভায় ভুক্তভোগী পরিবারের আর্তনাদে চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। বিএনপি নেতৃবৃন্দসহ আগত অনেকেই এমন বক্তব্যে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ছাত্র আন্দোলনে সাভারে শহীদ ইয়ামিনের পিতা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ, এর থেকে ভারী কোনো বোঝা নেই। আর কোনো পিতা-মা-বোনকে এই নির্মম পরিস্থিতির শিকার যেন না হতে হয়। আমার ছেলেকে পুলিশ সাঁজোয়া যান থেকে টেনে-হেঁচড়ে ফেলে দেওয়ার দৃশ্য যেন আর দেখতে না হয়। এমন কোনো ইয়ামিন যেন পুলিশের ঘৃণার পাত্র না হয়। আগামী দিনে পুলিশ যেন তার সঠিক দায়িত্ব পালন করেন। আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই এবং শহীদের মর্যাদা দেওয়ার আহ্বান জানাই। এসময় তিনি ‘সাঁজোয়া যান’ নিয়ে নিজের লিখিত একটি কবিতা পাঠ করেন।

টাঙ্গাইলে গুলিতে দুই চোখ হারানো হিমেলের মা বলেন, আমার ছেলে কথা বলতে পারে না, দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আমি গরিব মানুষ। গুলিতে আমার ছেলের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, আমার ছেলে যেন তার একটা চোখ দিয়ে দেখতে পারে। আমি ন্যায়বিচার চাই।

নিহত লিটন চন্দ্র শীলের মা রুবি রানী শীল বলেন, ‘আমার ছেলেকে মেরেছে খুনি হাসিনা। আমি বিচার চাই।’

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের পুলিশের গুলিতে নিহত ইমনের ছোট ভাই সুজন বলেন, ‘আমার ভাই টিউশনি করে আমাদের পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি নিজেও পড়াশোনা করতেন। গুলিতে আহত হওয়ার পর  হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে ফেরত দেওয়া হয়। পরে রাত তিনটার দিকে ঢাকায় নিয়ে আসার পথে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে আবারো পেটে নির্মম নির্যাতন করে। আমার ভাই পুলিশের পুলিশের হাত-পা জড়িয়ে ধরলেও তারা ক্ষমা করেনি। আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে, হত্যাকারীদের বিচার যেন দেশের মাটিতে দেখতে চাই। তাদের ফাঁসি চাই।’

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সাবেক বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ বলেন, ‘গত ১৫ বছরে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা যত গুম খুন হত্যা করেছে, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার বাংলার মাটিতে হবে ইনশাআল্লাহ। সম্প্রতি একটি অডিও রেকর্ড শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি নাকি চট করে বাংলাদেশে ঢুকবেন। আমরাও রেডি আছি, এবার স্বজন হারানোর বেদনার গল্প আমরা আপনাকে শোনাবো।’