তোফাজ্জল হত্যায় অভিযুক্ত ৬ শিক্ষার্থী ‘ছাত্রলীগের’

তোফাজ্জল হত্যায় অভিযুক্ত ৬ শিক্ষার্থী ‘ছাত্রলীগের’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ছয় শিক্ষার্থী দায় স্বীকার করে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। এই অভিযুক্ত ছয় শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সাথে সংশ্লিষ্টতা ও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে দুইজন ঢাবি ছাত্রলীগের হল ও অনুষদ কমিটির নেতা।

অভিযুক্ত ছয় শিক্ষার্থী হলেন— ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া; মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া; পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মো. মোত্তাকিন সাকিন; গণিত বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ; ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী আল হোসাইন সাজ্জাদ ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ওয়াজিবুল আলম।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ১৬৪ ধারায় তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার ব্যাপারে তারা জবানবন্দি দেন।

অভিযুক্ত ছয় শিক্ষার্থীর বিষয়ে ফজলুল হক মুসলিম হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অতীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি যেভাবে চলত অর্থাৎ চার নেতার নেতৃত্বই ছিল শেষ কথা। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মোট চারটি গ্রুপ। এরমধ্যে অভিযুক্ত আহসানুল্লাহ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হুসাইনের অনুসারী ছিলেন। জালাল মিয়া ও আল হোসাইন সাজ্জাদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের গ্রুপ করতেন। মো. সুমন, মুত্তাকিন সাকিন, ওয়াজিবুল করতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের গ্রুপ।

তারা আরও জানায়, প্রোগ্রাম ও গেস্টরুমে ব্যাচের হেড ছিল ওয়াজিবুল আর সুমন। সৈকতের একটিভ অনুসারী হিসেবে সামনের কমিটিতে এ দুজনের পদ পাওয়ার ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত ছিলেন। জালাল মিয়া কারণে-অকারণে জুনিয়রদের মারতেন, প্রায়শই শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন চালাত। আহসান উল্লাহ উগ্র স্বভাবের এবং শিক্ষার্থীদের একই কায়দায় নির্যাতন করতেন।

তাদের ঢাবি ছাত্রলীগে তাদের পদ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা জানায়, জালাল মিয়া ছিলেন ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপসম্পাদক। আহসান উল্লাহ ছিলেন গণসংযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক উপসম্পাদক। আল হোসাইন সাজ্জাদ ছিলেন আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স অনুষদের দফতর সম্পাদক।

পদধারী হওয়ার পরও কীভাবে এসব প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতারা থেকে গেলেন সে প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৫ তারিখে বহিরাগত এবং ছাত্রদের সংঘর্ষের পর ১৭ তারিখ যখন ছাত্রলীগকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া করা হয় তখন আর্টস এবং বিজনেসের হলগুলোতে পোস্টেড ও একটিভ সকলকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের সাইন্সের তিন হলে কেবল ক্যান্ডিডেটদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

তারা আরও বলেন, অভিযুক্তদের অনেকে আবার পদত্যাগকারী ছিল, অনেকে আবার আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের পক্ষে যোগ দেয়। কেউ কেউ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থক ছিল, আবার ছাত্রলীগের সাথে সংযুক্ততাও বজায় রেখেছিল। ৫ আগস্টে চূড়ান্ত পট পরিবর্তনের পর তারা একেবারেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মত হলে থাকতে শুরু করে। তাই তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা ব্যবস্থা নেননি।

উল্লেখ্য, চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ তোফাজ্জলকে। পিটিয়ে হত্যার আগে তাকে খেতে দেওয়া হয়। এরপর পাশবিক কায়দায় তাকে স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করে এবং গোপনাঙ্গে লাথি মেরে হত্যা করা হয়। আনুমানিক ২ ঘণ্টা নির্যাতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষককে বিষয়টি জানালে তাদের সহায়তায় মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।