এখনো আওয়ামী সিন্ডিকেটের দখলে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ

ছবিতে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বদিউজ্জামান সোহাগের সঙ্গে তাছবি বিল্ডার্সের সত্ত্বাধিকারী তৌহিদ আকন
সময় ও দেশ বদলালেও এখনো বদলেনি অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতির আখড়া বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল কার্যালয়।
দীর্ঘ ১৭ বছরের আওয়ামী সিন্ডিকেট এখনো কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন দেদারছে। সম্প্রতি একটি টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর বিষয়টি সামনে এসেছে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, অতীতের কোনো অনিয়মই আর চলতে দেওয়া হবে না। অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান সাইফুল্লাহ পনির তার লোকজন নিয়ে গত চার বছর কোনো প্রকার টেন্ডার ছাড়াই ঝালকাঠির গাবখান চ্যানেলের টোল আদায় করতেন। ওই সময়ের মধ্যে তিনি তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এবং আইনি মারপ্যাঁচে ফেলে দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এই চ্যানেলটির টেন্ডার প্রক্রিয়া আটকে রাখেন।
তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকরের পতনের পর প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নৌ-চ্যানেলটির দরপত্র আহ্বান করে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ। যাতে একাধিক দরপত্র দাখিল হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা মো. তৌহিদ আকনের মালিকানাধীন মেসার্স তাছবি বিল্ডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ দরদাতা হয়। তবে দরপত্রের সঙ্গে জমাকৃত কাগজপত্রে গুরুতর কিছু ত্রুটি থাকায় সেটি নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।
সূত্র জানিয়েছে, তৌহিদ আকন মূলত আওয়ামী লীগ নেতা খান সাইফুল্লাহ পনিরেরই লোক। তাকে দিয়েই এই চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইছেন পনির। যে কারণে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে টেন্ডার বাগিয়ে নিতে চাইছেন তিনি।
বিআইডব্লিউটিএ’র শর্ত অনুযায়ী টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া কোনো পক্ষই নির্ধারিত শর্ত পূরণ না করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। কিন্তু তাছবি বিল্ডার্স কর্তৃক জমাকৃত নথিপত্রে দেখা যায়, দরপত্রের ৫ নম্বর পৃষ্ঠা পূরণ অসম্পূর্ণ, ১০ নম্বর পৃষ্ঠায়ও চাহিদা অনুযায়ী তথ্য দেওয়া হয়নি, দরপত্রের শর্তে চারিত্রিক সনদপত্র দেওয়ার বিধান থাকলেও তা সরবরাহ করেনি।
এ ছাড়া দরপত্রের সঙ্গে জমাকৃত সকল কাগজপত্র সত্যায়িত করার শর্ত থাকলেও কোনো কাগজপত্রই তারা সত্যায়িত করেনি। এ ছাড়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনামতে এক্সিম ব্যাংকের কোনো পে-অর্ডার গ্রহণ যোগ্য নয় এমন কথা বলা হলেও তাছবি বিল্ডার্স উক্ত ব্যাংকের পে-অর্ডার দাখিল করেছে।
এই অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিহন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এগুলো খুবই সামান্য ভুল। এই ভুলে দরপত্র বাতিল হয় না। দরপত্র বাতিল হলে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে। সুতরাং এটা করা যাবে না।
তবে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা দ্য মিরর এশিয়াকে জানান, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সামান্য ভুলকেও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা কাগজপত্র দেখবো। সেখানে ভুল থাকলে অবশ্যই সেটি বাতিল করা হবে। অতীতে অধিদপ্তর যেভাবে চলেছে, সেভাবে সামনে আর চলবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।