টেলিকম ও ইন্টারনেট সেবা সংস্কারের দাবি গ্রাহকদের

সেবার মান উন্নয়ন ও গ্রাহক উদ্বেগ নিরসনে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা খাতের সংস্কারে একটি রোডম্যাপ প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিসিএ)।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএমপিসিএ'র দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত গণপরামর্শ সভায় এ দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক সদস্য মুকুল-ই-ইলাহী চৌধুরী জরুরি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ভোক্তাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা খাতের সংস্কারে বর্তমান সরকারের একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘোষণা ১৫ দিন থেকে দুই মাসের মধ্যে দিতে হবে।

বিএমপিসিএর উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালিদ আবু নাসের টেলিযোগাযোগ ইকোসিস্টেমের অদক্ষতার কথা তুলে ধরে বলেন, প্রতিটি ধাপে বর্জ্য কমানো গেলে ১০ থেকে ১২ শতাংশ খরচ কমানো সম্ভব। তিনি এই খাতে প্রতিযোগিতার অভাবের সমালোচনা করে বলেন, ‘প্রতিযোগিতার কথা বলা হলেও বাস্তবে এর অস্তিত্ব নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ইন্টারনেট ডাটা ও ভয়েস কলের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে জবাব চেয়েছেন বিএমপিসিএ সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। গত দেড় মাসে হঠাৎ করে ইন্টারনেট ডাটা ও ভয়েস কলের চার্জ কেন বেড়ে গেল কেন? আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মেসেজ চার্জ ৫ টাকা থেকে ১০ টাকায় লাফিয়ে উঠল কেন?

আহমেদ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকার, বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটররা যদি সাশ্রয়ী ও আনলিমিটেড ইন্টারনেট ডাটার চাহিদা মেটাতে পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে বিএমপিসিএ ইন্টারনেট সেবা বয়কটসহ কঠোর পদক্ষেপ ঘোষণা করবে। তিনি মোবাইল কল ও ইন্টারনেট ডেটার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণের জন্য গণশুনানির আহ্বান জানান।

টেলিকম খাতের অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএমপিসিএ'র সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘টেলিকম মন্ত্রণালয় আগের সরকারের আমলে যেভাবে কাজ করত, সেভাবেই কাজ করছে। আমরা পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ দেখছি না।’

জলাধার রক্ষা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ ইবনে রানা ইন্টারনেট ব্যবহারের অপরিহার্য প্রকৃতির উপর জোর দিয়ে এটিকে পানির সাথে তুলনা করেন। তিনি বলেন, পানি ছাড়া যেমন জীবন চলতে পারে না, তেমনি ইন্টারনেট ছাড়া চলতে পারে না। ইন্টারনেট ও মোবাইল কল সেবার মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে।

সভায় কলড্রপ, নিঃশব্দ কল, ইন্টারনেটের ধীরগতি, অর্থ আটকে যাওয়া, হঠাৎ ব্যালেন্স কেটে নেওয়া, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় নেটওয়ার্ক না থাকা এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবার উচ্চ চার্জসহ বিভিন্ন সেবার বিষয়ে অভিযোগ তুলে ধরেন বিভিন্ন পেশার প্রায় ১৫ জন গ্রাহক। মোবাইল কোম্পানি ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের বেতন-ভাতার বিষয়ে স্বচ্ছতা আনার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান শাশ্বত মনির ও বিএমপিসিএ'র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. আমিনুল ইসলাম।