‘শিবির রাজনীতি করলে ছাত্রলীগও একদিন আসবে না তার নিশ্চয়তা কী?’

সংগৃহীত ছবি

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর প্রকাশ্যে এসেছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার কমিটি।

১৯৮৯ সালে ছাত্রদলকর্মী কবির হত্যাকাণ্ডের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধে একমত হয় ২২টি সংগঠন। এরপর থেকে সেখানে প্রকাশ্যে আসেনি ছাত্রশিবির।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দর্শন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাকি নিজেকে ছাত্রশিবিরের জাবি শাখার প্রচার সম্পাদক জানিয়ে একটি বিবৃতি দেন। ওই বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে শিবিরের সভাপতি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের হারুনুর রশিদ রাফি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাংলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মহিবুর রহমান মুহিবের নাম জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকল দলের অংশগ্রহণে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে সুস্থ ধারার রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে ছাত্রশিবির সর্বদা প্রস্তুত। আবাসিক হলগুলোতে কোন ধরনের দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, মাদকের বিস্তার রোধে ছাত্রশিবির অঙ্গীকারাবদ্ধ। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ আনয়ন, গবেষণামুখী শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবায়ন, সুস্থ ধারার সংস্কৃতির বিকাশ ও নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে ছাত্রশিবির কাজ করে যাবে। ছাত্রশিবির চায় ছাত্র সংসদকেন্দ্রীক সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরে আসুক।

মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নিয়ে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ছাত্রশিবিরের প্রতিনিধি রাখার জন্য সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগোযোগ করা হয় বলে জানা গেছে। তবে তাদের ছাড়াই ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই রাতে জাবি ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে আসে।

ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি দাবি করে ছাত্রশিবিরের বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ছাত্রশিবিরকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে নিষিদ্ধের একটি বয়ান তৈরি করে এসেছে। আদতে এই বয়ানের কোনো সত্যতা নেই।

১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১৪২তম সভায় শিবির নিষিদ্ধের প্রস্তাবনা এলেও তা সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়নি। সভার সিদ্ধান্ত ছিল ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত বিধায় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়'।

ছাত্ররাজনীতির যৌক্তিক সংস্কারে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটির জাবি শাখার শীর্ষ দুই নেতা বলেন, গত ১৫ বছরে ধরে আওয়ামী দুঃশাসনের ফলে রাজনীতির সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের রাজনীতি চাই। চব্বিশের শহীদদের আশা-আকাঙ্ক্ষার আলোকে চলমান রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক সংস্কার হোক।

এদিকে, ছাত্রশিবিরের বিবৃতির পর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। তারা বিক্ষোভে জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবির বিরোধী স্লোগান দেন।

বক্তারা বলেন, শিবির ফিরে এলে কয়েক বছর পর ছাত্রলীগও দেখা যাবে ফিরে এসেছে। তাই শিবির ও ছাত্রলীগ এই দুই ফ্যাসিস্ট সংগঠনই নিষিদ্ধ থাকতে হবে।