চট্টগ্রামে ফ্যাসিবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক সংগঠন জনমুক্তির আত্মপ্রকাশ
চব্বিশের জুলাইকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে জনমুক্তি নামে ফ্যাসিবাদবিরোধী একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। গত ১ নভেম্বর চট্টগ্রামের ‘দ্য ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ’ মিলনায়তনে এ সংগঠনের আত্মপ্রকাশের পাশাপাশি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনমুক্তির সদস্য সচিব মুরাদ হাসান। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রে এখনও কাঠামোগত ফ্যাসিজম বিদ্যমান। কেবল ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে। সমাজও ফ্যাসিজমের আঁতুড়ঘর। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামো থেকে ফ্যাসিজম দূর না করলে রাষ্ট্র থেকে পুরোপুরি ফ্যাসিজম হটানো সম্ভব না।’
এছাড়াও তিনি রাষ্ট্রের কাঠামো সংস্কারের সাথে শ্রমিকদের রাষ্ট্রে অংশীদার করে তোলা মৌলিক চাহিদা এবং পাঠ্যপুস্তকে ছাত্রদের পাশাপাশি রিকশা শ্রমিকদের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করে জনতার ইতিহাস লেখার কথা বলেন।
তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আর্মি হেফাজতে যারা ছিলেন তারা কারা এবং কোথায় আছে? এদের বিচার কীভাবে হবে?’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনমুক্তির আহ্বায়ক নাশাদ ময়ূখ, সদস্য কাজী ওয়ালী উল্লাহ, সাইফুর রূদ্র, চৌধুরী সাকিব আরিফসহ চট্টগ্রামস্থ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জি এইচ হাবীব এবং আর রাজী, কবি ও বুদ্ধিজীবী রিফাত হাসান, নারী অঙ্গনের সম্পাদক নাদিরা ইয়াসমিন, লেখক মোকাররম হোসাইন, কবি ও গদ্যকার সৈকত দে, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জাহেদুল আলম এবং বাহাছের সম্পাদক জোবাইরুল হাসান আরিফ।
কবি ও বুদ্ধিজীবী রিফাত হাসান বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের ওপর যে গণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা পায়, তা বাহাত্তরের সংবিধানের মাধ্যমে পুনরায় বেদখল হয়ে যায়। এ কারণে বিদ্যমান সংবিধান কখনো জনগণের এথিক্যাল অথরিটি হয়ে উঠতে পারেনি।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, যে সংবিধান বলবৎ থাকা অবস্থায় বাকশালের মতো একটি একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয় এবং ’৭৩-এর মতো একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের অবতারণা ঘটে সে সংবিধান কখনও জনগণের অধিকারের রক্ষাকবচ হতে পারে না। তাই রাষ্ট্রগঠনের এমন জরুরি মুহূর্তে তিনি নতুন সংবিধান তৈরির পক্ষে গুরুত্ব তুলে ধরেন।
কবি ও গদ্যকার সৈকত দে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে খুব জোরেশোরে শোনা যাওয়া ইনক্লুসিভনেস ব্যাপারটি কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং তা কেবলই শব্দ হিসেবে রয়ে যাবে কিনা এ ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
নারী অঙ্গন সম্পাদক নাদিরা ইয়াসমিন তার বক্তব্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সমান অংশগ্রহণ যে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য সে ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করেন। জুলাই পরবর্তী সময়ে গঠিত প্রায় ১০টির মতন কমিশনে নারীদের অনেকটা টোকেন হিসেবে ব্যবহারের ব্যাপারেও তিনি প্রতিবাদ ব্যক্ত করেন।
চবি শিক্ষক আর রাজী ৩৬ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানকে গণ নয় জন-অভ্যুত্থান বলে অভিহিত করেন। তার মতে এই আন্দোলনে অধিকাংশ মানুষ পথে নেমে এসেছিল জন বা ব্যক্তি হিসেবে। গণ অর্থাৎ অতটা শলাপরামর্শ করে গ্যাং ধরে বা সংঘবদ্ধভাবে নয়। ফলে এই সূত্রে সংগঠনের নাম গণমুক্তি না হয়ে জনমুক্তি হওয়াকে তিনি প্রাসঙ্গিক মনে করেন, কারণ এটি শুধু যৌথভাবে মুক্তির কথা বলছে না, বরং ব্যক্তির নিজের মুক্তির ব্যাপারেও আগ্রহী বা সংগ্রামী করে তুলেছে।
অনুষ্ঠানে মোতাছিম বিল্লাহ জনমুক্তির ঘোষণাপত্র পাঠ করার পাশাপাশি নাশাদ ময়ুখ-কে আহ্বায়ক এবং মুরাদ হাসান-কে সদস্য সচিব করে গঠিত জনমুক্তির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করেন। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাছিম বিল্লাহ, খোবাইব হামদান ও সৌরভ মাহমুদ; যুগ্ম সদস্য সচিব মো. আরাফাত ইমরান; মুখপাত্র তমসা অরণ্য ও খাঁন আয়্যুব। ২৬ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আরও ১৮ জন বিভিন্ন শ্রেণি-বয়স ও পেশার মানুষ রয়েছেন।
জনমুক্তি সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোতে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী প্রবণতা দূরীকরণে এবং এর বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক লড়াই গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৯ দফা নিয়ে কাজ করবে বলে জানিয়ে উক্ত অনুষ্ঠানে ৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।