আন্দোলনের নামে তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের হঠকারিতা, নিন্দার ঝড়

আন্দোলনের নামে তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের হঠকারিতা, নিন্দার ঝড়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের একটি তিতুমীর কলেজ। এই প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি উঠেছে গত অক্টোবরে। ২৪ অক্টোবর এই দাবিতে বিক্ষোভ করেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার (১৮ নভেম্বর) আবার বিক্ষোভে নেমে টানা সাড়ে চার ঘণ্টা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ট্রেন থামাতে গিয়ে তারা ছুঁড়ে মারেন ঢিল। যাতে রক্তাক্ত হয়েছেন শিশুসহ ট্রেনের যাত্রীরা। আন্দোলনের নামে তাদের এই হঠকারিতায় বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

অনেকেই তাদের এই আন্দোলনকে শিক্ষার্থীসুলভ বিক্ষোভ মানতে নারাজ। তাদের মতে, কোনো দাবির পক্ষে এমন সহিংস বিক্ষোভ ক্ষমার অযোগ্য। এই কর্মকাণ্ডের পেছনে অনেকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলছে। কেউ কেউ বিক্ষুব্ধ হয়ে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের চাকরি না দেওয়ার ঘোষণাও দিচ্ছেন।

কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বেলা ১১টার দিকে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বের হন। বেলা সাড়ে ১১টার নাগাদ মহাখালীতে সড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় আন্দোলনকারীরা মহাখালী উড়ালসড়কের (ফ্লাইওভার) নিচে অবস্থান নেন।

আন্দোলনকারীরা এ সময় একটি চলন্ত ট্রেনকে থামানোর চেষ্টা করেন৷ কিন্তু চালক তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনটি থামাতে পারেননি। ফলে ট্রেনটি চলতে থাকে। বাধা দেওয়ার পরেও ট্রেন না থামায় চটে যান শিক্ষার্থীরা। রেললাইনে থাকা পাথর নিয়ে তারা এলোমেলোভাবে ট্রেনের বগি লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়তে থাকেন।

এ সময় ট্রেনের বগিতে থাকা যাত্রীরা সেই পাথরের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন। শিক্ষার্থীদের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে আহত হয়েছে এক শিশুও। এছাড়া অন্তত ১০ থেক ১২ জন নারী ও পুরুষ যাত্রী আহত হন। ঘটনার পর ট্রেন চলাচল বন্ধ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

এ ঘটনার পরও চার ঘণ্টা টানা আন্দোলন চালিয়ে যান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা৷ রেল ও সড়কপথ প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা৷ এ সময় হাসপাতাল অধ্যুষিত মহাখালী এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়৷ এয়ারপোর্ট সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কেও স্থির দাঁড়িয়ে ছিল হাজার হাজার যানবাহন। আন্দোলনের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কয়েক লাখ মানুষকে।

ট্রেনে হামলার ঘটনায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগাম্যমে। ঘটনার পরপর অনেকেই হামলায় আহতের ছবি শেয়ার করে নিন্দা জানান। তবে তাতে কর্ণপাত করেননি আন্দোলনকারীরা।

‘ট্রাফিক অ্যালার্ট’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে এস এম শাহরিয়ার নামে এক ব্যক্তি পোস্ট করেন- ‘আমি নিজে তিতুমীর কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স করা, তারপরেও যদি অফিসে কোনো তিতুমীরের কেউ সিভি দেয় ওরে ১০টার সময় ইন্টারভিউতে ডাকায়া এসিবিহীন রুমে সারাদিন বসায়া বিকাল ৫টায় ইন্টারভিউ নেয়ামু।"

ওই পোস্টের মতামত অংশে ফাহমিদা হোসেন আলো নামে একজন মন্তব্য করেন- ‘ততক্ষণে অফিস অক্ষত নাও থাকতে পারে। যারা ট্রেনে ভাঙচুর করে মানুষদের কষ্ট দিল, এত মানুষের হয়রানি করল, এদের অফিসের রুমেও বসতে দেওয়া উচিত না।’

অপর এক পোস্টে সালেহ আহমেদ নামে একজন লিখেছেন- ‘তিতুমীর কলেজের ছাত্ররা যা করেছে, তা অন্যায়। যৌক্তিক দাবি থাকলে দাবি জানাবে, তাই বলে ট্রেনে ঢিল ছুড়ে মানুষজনকে আহত করবে? আর দেশে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাব যে, কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানাতে হবে? এই কলেজের ছাত্ররা জবে এপ্লাই করলে, এদেরকে না নেওয়াই উত্তম হবে।’

ট্রাফিক অ্যালার্ট গ্রুপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আশিক শুভ নামে এক ব্যক্তি। তিনি লিখেছেন, ‘এমনিতেও তিতুমীরের পোলাপাইনদের আমি গত ১৫ বছরে কোনো মাল্টিন্যাশনাল এ দেখি নাই। তারপরও আজকের মহাখালীর ঘটনার পর ভবিষ্যতে যেকোনো পজিশানে তিতুমীরের পোলাপানের কোনো সিভি যদি পাই, সাথে সাথে রিজেক্ট করব। পাঁচ ঘণ্টা মহাখালীর মতো জায়গা ব্লক করে রাস্তা আর ট্রেন বন্ধ করে যদি তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেতাব পেয়েও যাও, আইসো জব মার্কেটে। দেখা হবে। কী ভয়াবহ অবস্থা পার করে, কতগুলো ছেলেমেয়ের লাশের উপর দিয়ে দেশটা এই অবস্থায় আসছে আজ। এমন করে নষ্ট হবে?’

জারিফ মাহমুদ নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘তিতুমীর কলেজ আজ যা করছে রাস্তায়! বোঝা গেল আসলেই তারা কলেজে পড়ার যোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যে জ্ঞানের দরকার, সেইটা আর যাই হোক তিতুমীর কলেজ এর নাই।’

হাসানুর রহমান মুন্না নামে একজন তার ব্যক্তিগত অভিমত ও তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আচরণের চিত্র তুলে ধরেছেন। ট্রাফিক অ্যালার্ট গ্রুপে করা পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘দুপুরে লাঞ্চে বের হয়ে সোজা মহাখালী রেলগেইট আসলাম। দেখলাম পুলিশ, সেনাবাহিনী ও তিতুমীরের স্টুডেন্টরা কথা বলছে এবং অনেকে রাস্তায় বসে আছে আশেপাশের সকল রাস্তা বন্ধ। অনেক অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী এসে তাদেরকে হাত জোর করে বলেছে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সটা অন্তত ছেড়ে দিন কিন্তু কে শোনে কার কথা। এক মহিলা সম্ভবত ওনার বাচ্চা স্কুলে ছিল নিয়ে আসতে যাচ্ছিল। তিতুমীরের টোকাইদের কাছে যেয়ে বললো বাবা তোমরা রাস্তাটা ছেড়ে দাও অনেকে কষ্ট পাচ্ছে রাস্তায়। অ্যাম্বুলেন্সে অনেকে কান্না কাটি করছে। মহিলার সাথে এমন বাজে আচরণ করেছে ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার মনে হয় তিতুমীর কলেজকে বিলুপ্ত করা এখন ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষিত লোক এমন আচরণ করতে পারে তাও আমার চোখের সামনে আমি তো অবাক হয়েছি।’

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের চাকরি দেবেন না, এমন শপথও করেন তিনি। লিখেন, ‘শপথ করে বলছি, একজন এইচআর প্রতিনিধি হিসেবে আমি যদি কোনো দিন তিতুমীর কলেজের কোনো স্টুডেন্টের সিভি পাই ইনশাআল্লাহ আজকে যা দেখালাম সেই চিত্র তখন আবার মনে পড়বে এবং ফলাফল কী হবে তা তো বুঝতেই পারছেন।’

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আচরণ ও কাজ-কর্মে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ জড়িত থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিক আহত রেল যাত্রীদের ছবিতে মন্তব্য করেছেন ইঞ্জিনিয়ার মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। তিনি লিখেছেন- ‘এরা কেউ ভালো ঘরের ভদ্র ছেলে না, এরা কখনো ছাত্র হতে পারে না। এরা হচ্ছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী দল।’

এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে না পেরে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢুকে গেছেন।  

তবে নিষিদ্ধ সংগঠন হওয়ায় ছাত্রলীগের কোনো নেতা বা কর্মীর বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হয়নি।