রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভারতের সাথে বাণিজ্য টানাপোড়েনে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ

স্বৈরশাসক  হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রভাব পড়তে পারে বাণিজ্য ক্ষেত্রে। টান পড়তে পারে আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও কাঁচামরিচের মতো নিত্য পণ্যের যোগানে। যা নিয়ে খানিকটা দুশ্চিন্তায় আমদানিকারকরা। চিন্তায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও। বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুদেশের স্বার্থেই হতে হবে সংযত।

আলু, পেঁয়াজ, আদা-রসুনের মতো জরুরি পণ্য আমদানিতে বড় উৎস এখনও ভারত। এসবের জন্য চীন, মিয়ানমার ও পাকিস্তানের মতো বিকল্প উৎস থাকলেও পরিবহন ব্যবস্থা ও সময় বিবেচনায় নজর প্রতিবেশী দেশটির দিকেই।

কিন্তু চলমান অস্থিরতার কারণে নিরবচ্ছিন্ন ও চাহিদামতো আমদানি নিয়ে কিছুটা চিন্তায় পড়েছেন আমদানিকারকরা। আর মিয়ানমারে যুদ্ধ বেঁধে থাকায় চাল আমদানি করা যাবে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে বড় ধরনের সন্দেহ রয়েছে।

জিরা, এলাচ, লবঙ্গ'র মতো মসলাজাতীয় পণ্যের জন্যও বড় নির্ভরতা ভারতের ওপর। যদিও, এসবের বেশিরভাগই আসে অবৈধ বা চোরাইপথে। একইভাবে আমদানি করা ফলেরও অন্তত ২০ শতাংশের জোগান দেয় দেশটি। ব্যবসায়ীরা জানান, এখনও খুব একটা প্রভাব না পড়লেও চিন্তা বাড়ছে দু'দেশের টানাপোড়েনে।

২০২৩ সালের আগে কখনো বাংলাদেশে  আলু আমদানিই করা হয়নি। এক সময় দেশটি বরং আলু রপ্তানি করতো। অক্টোবরে প্রথমবারের মতো আলু আমদানি সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইডের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশটি থেকে ১৭ লাখ মার্কিন ডলারের আলু আমদানি হয় বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিসি) তথ্য মতে ওই অর্থবছরে বাংলাদেশে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক কোটি ১৬ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ছয় লাখ মেট্রিক টন।

এদিকে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৩৭ লাখ মেট্রিক টন লাখ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ৩৮ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে এ বছর। কিন্তু এ বছরও ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পেঁয়াজ-রসুন জাতীয় পণ্যের রপ্তানির হিসাবে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবেশী বাংলাদেশে প্রায় ২০ কোটি ডলারের পণ্য পাঠিয়েছে ভারতের ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশে বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা ২৭-২৮ লাখ টন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকর্তারা বলেছে দেশকে ধান-চালের নিরিখে 'খাদ্য শস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ’ বলে দাবি করেছিল। তবুও, সরকারী ও বেসরকারি চাল আমদানি থেমে থাকেনি।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দেড় কোটি ডলারের চাল রপ্তানি করা হয়েছিল বাংলাদেশে। তবে এর আগের অর্থ বছরে ৩১ কোটি ডলারের চাল বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়। সর্বশেষ অর্থবছরে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার কোটি ৩৪ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয় চার কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন।

আমদানিকারক মকবুল হোসেন বলেন, ভারত সরকার যদি বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ঠিক না রাখে, আমাদের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের ব্যবসায়ী ও দেশটির সরকার।

নিত্য পণ্য ছাড়াও, তুলা, সুতা, রাসায়নিক ও ওষুধের কাঁচামালসহ বহু শিল্পের কাঁচামাল আনতে হয় ভারত থেকে। বিপরীতে সে দেশটিও আমদানি করে বেশকিছু প্রয়োজনীয় পণ্য। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমানে ৭ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি অস্থিরতার কারণে আরও বড় হতে পারে।

ভারত আমদানির তুলনায় বেশি রপ্তানি করে, এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ চারে।