তীব্র শীতে দুভোর্গে দেশবাসী

ছবি : বাসস

দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌসুমের পথম দফার হাড় কাঁপানো ঠান্ডা জনগণের স্বাভাবিক চলাচলকে প্রায় অচল করে দিয়েছে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) বুধবার প্রকাশিত জানুয়ারি মাসের মাসিক আউটলুক অনুসারে, ইদানিং ঘন কুয়াশার কারণে সমগ্র দেশে বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে দেরি করে সূর্যের দেখা মেলায় তাপমাত্রা তীব্রভাবে হ্রাস পাচ্ছে। 

বিএমডি’র পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি জানুয়ারি মাসে দেশের পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এক থেকে দুইটি মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

এ ছাড়া এ মাসেই দেশের অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার (বাসস) জেলা সংবাদদাতারা জানান, বিরাজমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভর্তি হওয়াদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক।

ঠান্ডা আবহাওয়া ও ঘন কুয়াশার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায়। ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কে যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে। 

প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের কারণে বরিশালে বিদেশি কম্বল, কাঁথাসহ শীতবস্ত্রের বিক্রি জমজমাট।

বরিশাল নগরী ও এর আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন বাজার ও অস্থায়ী দোকানপাট  ঘুরে দেখা গেছে  ঠান্ডার কারণে দরিদ্ররা বেশি শীতের পোশাক কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় কম্বল, সোয়েটার, ব্লেজার, শাল, ক্যাপ ও মোজাসহ গরম কাপড়ের পাশাপাশি কমফোটার বিক্রিও এ সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে বেড়েছে অনেকগুণ। 

ফেনী, রংপুর, জামালপুর ও দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় সরকারি, বেসরকারি ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতার্ত দরিদ্র ও দুস্থ মানুষের মাঝে কম্বল ও অন্যান্য গরম কাপড় বিতরণ করা হচ্ছে। 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে শুক্রবার বেলা রাত ১১টায় মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কুয়াশা কিছুটা কমলে আজ সকাল সাড়ে ৬টার পর আবার শুরু হয়।

চাঁদপুরে শীতের তীব্রতায় অসহায় হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

সিরাজগঞ্জে গত কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

ঘন কুয়াশা ও প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে শহরে বসবাসকারী মানুষের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের লোকজন বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। আজ সকাল ৬টায় সিরাজগঞ্জে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঘন কুয়াশার কারণে রাতে যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন ধীর গতিতে চলাচল করছে এবং ভোরে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখো গেছে। 

ঝিনাইদহে হাড় কাঁপানো শৈত্যপ্রবাহে দিনমজুর, শ্রমিক ও নিঃস্ব মানুষজন বিপাকে পড়েছেন। জেলায় শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় করছেন।

শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ঝিনাইদহ জেলা জুড়ে ঘন কুয়াশা পড়েছে এবং বর্তমানে উত্তর দিক থেকে বয়ে যাচ্ছে ঠান্ডা বাতাস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ঝিনাইদহে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকতে পারে। 

সাতক্ষীরায় আজ দুপুর ১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। শ্রমজীবী ও ভাসমান মানুষ আগুন জ্বালিয়ে তাদের দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, আজ সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বিএমডি আজ তার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, পঞ্চগড় জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। আজ মধ্যরাত থেকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।

পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ‘আজ মধ্যরাত থেকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং কিছু জায়গায় তা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।’

এতে বলা হয়েছে, ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন ও সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে।

ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশের কোথাও কোথাও দিনের বেলাও ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে।

বিএমডি শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে রংপুর বিভাগের তেতুলিয়ায় ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ সকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রংপুর বিভাগের তেতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ঢাকায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।