১২টি অকেজো উড়োজাহাজের কী হবে?

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা বারোটি বিমান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এসব বিমান বিক্রয়ের জন্য নিলাম প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানের মালিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংকগুলোর কাছে বিপুল পরিমাণ বকেয়া পাওনা থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো নিলাম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে এই বিমানগুলো বিমানবন্দরে পার্কিং জায়গা দখল করে রাখায় সিএএবি পার্কিং আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সিএএবি একাধিক নোটিশ জারি করলেও মালিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিমানগুলো সরানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। যে কারণে গত বছর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ১২টি বিমান জব্দ করেছে।

পরিত্যক্ত বিমানগুলোর মধ্যে আটটি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের। দুটি রিজেন্ট এয়ারয়েজের, একটি জিএমজি এয়ারলাইন্সের এবং একটি এঞ্জেল এয়ারওয়েজের।

বিমানগুলো জব্দ করার পর সিএএবি নিলামের মাধ্যমে বিক্রয়ের প্রস্ততি নিয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রপ্তানি কার্গো এলাকার সামনে এপ্রনে বিমানগুলো এবং তাদের আনুষঙ্গিক সামগ্রী পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ে গেছে।

গত বছর ১০ই জুন সিএএবি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এগুলো জব্দ করে নিলামে তোলার নির্দেশ দেয়।

নিলামের মাধ্যমে বিমান বিক্রয়ের জন্য এসব সামগ্রীর স্ক্র্যাপ মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন; তবে সিএএবির এ ধরনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো জনবল নেই।

এই পরিস্থিতিতে সিএএবি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি সভায় বিমানগুলোর স্ক্র্যাপ মূল্য নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পরামর্শক বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছে।

অবশেষে সিএএবি’র সভায় নিলামে বিক্রয়ের জন্য স্ক্র্যাপ মূল্য নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন সেন্টারকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়াও নিলামে তোলার আগে আইনি দিকগুলো পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে, বিমানগুলোর মালিক প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করেছে যে সিএএবি এগুলো নিলামে তুলতে পারবে না, কারণ সবগুলো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে দায় থাকবে। নিলাম শুরু হলে ব্যাংকগুলো নিলাম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করবে। এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরামর্শক বা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা অযথা অর্থ ব্যয় করা হবে।

বিমান বিশেষজ্ঞ এবং ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী ওহিদুল আলম দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, নিলামের মাধ্যমে বিমান বিক্রয় করা সঠিক সমাধান নয় এবং মালিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এর মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠান তাদের বিমানগুলো ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছিল কিন্তু সিএএবি তাদের সহযোগিতা করেনি।

কিন্তু সিএএবি যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে তা ফলপ্রসূ হবে না, কারণ সংস্থাটি নিলামের মাধ্যমে ন্যূনতম মূল্য পাবে, যেখানে বাজারে বিমানগুলোর পুনর্ব্যবহারযোগ্য মূল্য রয়েছে বলে জানান ওহিদুল আলম।