মধ্যরাতে রণক্ষেত্র ঢাবি, সোমবারের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত

মধ্যরাতে রণক্ষেত্র ঢাবি, সোমবারের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত

আন্দোলনরত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবির প্রো-ভিসির বাসভবন ঘেরাও করতে এলে ক্যাম্পাসে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের পাশাপাশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাবির সোমবারের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব অবরোধ ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসির বাসভবনের উদ্দেশে রওনা দেন। ঢাবি ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখে এলে বাধার মুখে পড়েন তারা। এ সময় ঢাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় পুলিশের সহায়তায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বাহিনীর  জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ এফ রহমান হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক ও হাজি মুহম্মদ মুহসীন হলের সামনে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। অপর দিকে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থান করছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। 

ঢাবি ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ঘটনাস্থলে গেলেও শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগান দেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক মিটিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোমবারের সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে৷ আগামীকাল ৭ কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। আশা করি সব পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার অহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ। রাত সাড়ে ১২টার দিকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে আমার অফিসে আলোচনাকে কেন্দ্র করে রাতে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছে তা দুঃখজনক। এতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। আমি বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু পরিবেশে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এই ভুল বোঝাবুঝি অবসান ঘটবে। 

এর আগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী মিরপুর রোড সড়ক অবরোধ করেন। এতে সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত মোড় ও এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এর  জেরে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সায়েন্সল্যাবে সড়ক অবরোধ করেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো:

১. ২০২৪-২৫ সেশন থেকেই সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।

২. শ্রেণীকক্ষের ধারণক্ষমতার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যাবে না।

৩. শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে।

৪. ভর্তি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্ক যুক্ত করতে হবে।

৫. সাত কলেজের ভর্তি ফি’র স্বচ্ছতা নিশ্চিতে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাবি ব্যতীত নতুন অ্যাকাউন্টে ভর্তি ফি’র টাকা জমা রাখতে হবে।