ভোট বাড়াতে ভারতে বাংলাদেশের মাইনরিটি ইস্যু ব্যবহার হচ্ছে : হিন্দু মহাজোট
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার পাল বলেছেন, স্বাধীনতার আগে থেকেই বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় দেশীয় ও বৈদেশিক রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে পিষ্ট।
তিনি বলেন, ‘মাইনরিটি কার্ড এখন রাজনৈতিক দলগুলোর ট্রামকার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ভারতীয় রাজনীতিবিদ, এমনকি আমেরিকার নির্বাচনেও বাংলাদেশের মাইনোরিটি ইস্যু তাদের ভোট বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করছে।’
আজ শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন জোটের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়ের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান সমন্বয়কারী বিজয়কৃষ্ণ ভট্টাচার্য, সহ-সভাপতি দুলাল কুমার মন্ডল, তরুণ কুমার ঘোষ ও নিতাই দে, যুগ্ম মহাসচিব বিশ্বনাথ মোহন্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক কিশোর কুমার বর্মন ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা প্রতিভা বাক্চী।
এ সময় জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকারসহ সকল নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর দাবি জানায় বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
দাবি আদায় না হলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পৃথক নির্বাচন হলে জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। এর মাধ্যমে সংখ্যালঘু সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
লিখিত বক্তব্যে প্রদীপ কুমার পাল বলেন, ‘মাইনরিটি ইস্যু নিয়ে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এক ভীতিময় পরিবেশে বসবাস করছে। প্রতিনিধিত্বহীনতায় হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মাইনরিটি সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। এ জন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উজ্জ্বল ও বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে জাতীয় সংসদসহ সর্বক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আসন সংরক্ষণ ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।’
অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার রায় বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় ও স্থানীয় সরকারসহ সব ক্ষেত্রে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার যৌক্তিক কারণসহ প্রস্তাব পেশ করেছিল হিন্দু মহাজোট। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় দুটি কমিশনই হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি ও প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করেছে। কমিশন দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেখানে উচ্চ কক্ষ বা নিম্নকক্ষ কোনো জায়গাতেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ব্যবস্থা রাখেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম ড. ইউনূসের মতো সজ্জন ব্যক্তি ও তার নিয়োগ করা কমিশন সদস্যদের হাত দিয়ে বিলুপ্তির পথে যাওয়া হিন্দু সম্প্রদায় রক্ষা পাবে। কিন্তু আমাদের সে আশা ভুল ছিল। আমরা আশাভঙ্গ হয়েছি।’
মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায় বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি আমলে নিতে পারে। সর্বশেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে হিন্দু মহাজোট। সরকার যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রাণের দাবি সবক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণ ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা মেনে না নিলে হিন্দু সম্প্রদায় কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং ভোট কেন্দ্রে যাবে না। অন্যকে ক্ষমতায় বসানোর হাতিয়ার হওয়ার, মারধর খাওয়ার ও বাড়িঘর ছেড়ে পালানোর জন্য আর কোনো নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে যেতে চায় না হিন্দু সম্প্রদায়।’