পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও আবাসিক হলগুলো প্রদক্ষিণ শেষে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে একত্রিত হন।
এ সময় তাদের ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘জনে জনে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘হলে হলে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’, ‘সংস্কার না বাতিল, বাতিল বাতিল’, ‘আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ইতিহাস বিভাগের ৫০তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নিবিড় ভূইয়া বলেন, ‘আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী—কারোরই পোষ্য কোটার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অজপাড়াগাঁয়ের একজন কৃষকের সন্তান যদি মেধার ভিত্তিতে জাহাঙ্গীরনগরে পড়াশোনা করতে পারে, তাহলে একজন শিক্ষার্থী যে জাহাঙ্গীরনগরে ছোট থেকে বড় হয়েছে, ভালো স্কুল কলেজে পড়াশোনা করেছে, তার কোনো ধরনের প্রিভিলেজ (সুবিধা) লাগবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না।’
‘আমরা বিশ্বাস করি, কোটা একটি প্রিভিলেজ, এটি কোনো অধিকার নয়। এই প্রিভিলেজটা ততক্ষণ পর্যন্ত দেওয়া হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দরকার, কিন্তু এটি কোনোভাবেই দরকার না। আজ পোষ্য কোটা চিরতরে বাতিল করার জন্য আমরা আন্দোলনে নেমেছি।’
আইন ও বিচার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাওছার আলম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দলনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের যৌক্তিক দাবি ওঠে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও এরই ধারাবাহিকতায় পোষ্য কোটা বাতিল নিয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করি। একপর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাংশ আমরণ অনশনে বসে। তারপর ভিসি মহোদয় ও সংশ্লিষ্টজনদের মাধ্যমে পোষ্য কোটার যৌক্তিক একটি সংস্কারের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন থেকে সরে আসে। তবে এই সংস্কারের বিপরীতে পোষ্য কোটার সুবিধাভোগীরা আজ অযোক্তিক আন্দোলন করে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থানের সময় তারা এক সাধারণ শিক্ষার্থী ভাইয়ের ওপর চড়াও হয় এবং তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করে। তারই প্রতিবাদে আমরা শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা বাতিল ও তাদের হামলার বিচার চেয়ে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।’
এর আগে, গত দুদিন ধরে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান পোষ্য কোটা সংস্কারের ঘোষণা দেন।
এর বিরুদ্ধে আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১১টায় পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটি মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন। এ সময় তারা পোষ্য কোটার পক্ষে লাগানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেললে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।